মজুত করে ১০ দিনেই ব্যবসায়ীদের পকেটে দেড়শো কোটি টাকা
পোস্ট করেছেন: dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: মে ১২, ২০২২ , ২:০৬ অপরাহ্ণ | বিভাগ: /////হাইলাইটস/////
সানি আজাদ : সরকার যখন ভোজ্য তেলের দাম কমায়, তখন ১৫ দিনেও কোনো পর্যায়ে সেই কম দামের তেল মেলে না। অথচ দাম বাড়ানোর ২ দিনের মধ্যেই বাজারে চলে আসে বাড়তি দামের তেল। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বলছে, ১০ দিনেই ব্যবসায়ীরা অনৈতিকভাবে পকেটে ঢুকিয়েছে ১শ ৫০ কোটি টাকার বেশি। সরকার ভোজ্য তেলের সংকট নিরসনে টিসিবির মাধ্যমে তেল আমদানির কথা জানালেও, তা কবে আসবে সেটি অনিশ্চিত। সয়াবিন ও পাম তেলে স্থানীয় উৎপাদন ও আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট প্রত্যাহারের প্রেক্ষাপটে গত ২০শে মার্চ সয়াবিন তেলের দাম কমায় সরকার। বোতলজাত তেলে লিটারে ৮ টাকা এবং খোলা তেলে ৭ টাকা কমানো হয়। কিন্তু ১৫ দিনেও সেই কম দামের তেল মেলেনি বাজারে। ব্যবসায়ীদের যুক্তি ছিল বেশি দামে কেনা তেল কম দামে বিক্রি করা সম্ভব নয়। বিশ্ববাজারে তেলের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে ভোজ্য তেলের দাম বাড়াতে সরকারকে চাপে রাখে ব্যবসায়ীরা। রমজানে না বাড়ালেও ঈদের ছুটির পর ৫ই মার্চ সয়াবিন ও পাম তেলের দাম লিটারে ৩৮ থেকে ৪৪ টাকা বাড়ানো হয়। ৫ই মার্চের পর দুইদিন ছিল শুক্র ও শনিবার। অথচ রবিবার থেকেই বাড়তি দামের তেল চলে আসে বাজারে। খুচরা ব্যবসায়ীরাও বাড়তি দামেই আগের কেনা তেল বিক্রি শুরু করে।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, মিলারদের কাছে ভোজ্য তেলের পর্যাপ্ত মজুদ থাকার পরও মার্চ মাস থেকেই বাজারে তেল সরবরাহ উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে দেয় তারা। কয়েকটি মিল ফেব্রুয়ারি মাসের তুলনায় মার্চ মাসে ৪ থেকে ৬হাজার মেট্রিকটন তেল কম সরবরাহ করে। ফলে কৃত্রিম সংকট তৈরি হয় ভোজ্য তেলের বাজারে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, তেলের ক্ষেত্রে আমরা এখন পর্যন্ত কোন সৎ ব্যবসায়ী খুঁজে পাইনি। আমরা যেখানেই এসবের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছি দেখা গেছে ছোট-বড় সব ধরনের ব্যবসায়ীরাই এই কারচুপির সঙ্গে জড়িত। কম দামে কেনা হলেও দাম বাড়বে এমন ঈঙ্গিতে ঈদের কয়েকদিন আগে থেকেই সয়াবিন তেল বিক্রি একরকম বন্ধ করে দেয় ব্যবসায়ীরা। অবৈধভাবে মজুদ করে দশদিনেই বড় অংকের টাকা পকেটে ঢোকায় তারা। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, আমরা যদি ১০ দিনেরও হিসেব করি, তাহলে ১০ দিনে ৪০ হাজার মেট্রিক টন। পার লিটারে তারা যদি ৪০ টাকা করে লাভ করে তাহলে কত পরিমান টাকা ভোক্তার পকেট থেকে চলে যাচ্ছে। এদিকে ভোজ্য তেলের বাজারে অস্থিরতা কমাতে, টিসিবির মাধ্যমে সয়াবিন তেল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সেই তেল কবে আসবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকলেও জুনমাসে আবারো এককোটি ফ্যামিলি কার্ডধারীদের কমদামে তেল দেয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে টিসিবি। রমজান মাসে ১১০ টাকা লিটারে টিসিবি তেল বিক্রি করলেও জুনে সে দামে বিক্রির সম্ভাবনা কম।
অন্যদিকে, সব কোম্পানির তেলও পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। তেলের সঙ্কটে রয়েছে পুরো বাজার। রাজধানীর মিরপুর কাঁচাবাজারের বিক্রেতারা জানিয়েছেন, শুধু মাত্র একটি কোম্পানির ৫ লিটারের তেল আছে তাদের কাছে। তাও চাহিদার তুলায় কম। তবে পামওয়েল মিলছে। সব তেলই নতুন বর্ধিত দামে বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা অভিযোগ করেন এখনও তেলের সাথে অন্য পন্য কেনার শর্ত জুড়ে দিচ্ছেন ডিলাররা। তবে রাজধানীর মালিবাগ কাচাবাজারের বিক্রেতারা জানিয়েছেন, তেলের সরবরাহ বেড়েছে। খুচরা বিক্রেতাদের ডিলারদের কাছে গিয়ে তেল কিনতে হচ্ছে। আর ক্রেতারা বাড়তি দামে তেল কিনে অসন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন। এদিকে, সয়াবিন তেলের সরবরাহ ঠিক রাখতে ১৫ দিন পরপর দাম সমন্বয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। এফবিসিসিআই সভাপতি বলেছেন, বিশ্ববাজারে প্রতিদিন সয়াবিন তেলের দাম ওঠানামা করছে। আর দেশে এক–দেড় মাস পরপর দাম সমন্বয় করা হয়। তাই বর্তমান প্রেক্ষাপটে ১৫ দিন পরপর সয়াবিনের দাম সমন্বয় করতে হবে। বিশ্ববাজারে দাম কমলে কমাতে হবে। আর দাম বাড়লে বাড়াতে হবে।
এ ছাড়া সয়াবিনের আমদানি পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহারের প্রস্তাব করেন জসিম উদ্দিন। একই সঙ্গে আগামী কোরবানি পর্যন্ত বাণিজ্যিকভাবে পরিশোধিত বোতলজাত ও খোলা সয়াবিন তেল আমদানি উন্মুক্ত করা এবং সান ফ্লাওয়ার, ক্যানোলাসহ সব ধরনের ভোজ্যতেল আমদানিতে শুল্ক ও কর প্রত্যাহারের বিষয়টি বিবেচনার সুপারিশ করেন। রাজধানীর মতিঝিলে ফেডারেশন ভবনে এফবিসিসিআইয়ের আয়োজনে ভোজ্যতেলের আমদানি, মজুত, সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি পর্যালোচনাবিষয়ক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। সভায় সয়াবিন পরিশোধনকারী কোম্পানির প্রতিনিধি, বেশ কয়েকজন পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী, রাজধানীর কয়েকটি বাজারের ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা উপস্থিত ছিলেন। অনলাইনে যুক্ত ছিলেন চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি গত সোমবার সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, সয়াবিন তেলের সংকটের পেছনে কারসাজি করেছেন খুচরা ব্যবসায়ী ও পরিবেশকেরা। তাঁদের কারসাজির কারণেই বাজারে তেলের সংকট তৈরি হয়েছে। ব্যবসায়ীদের বিশ্বাস করাটাই ছিল আমাদের ভুল।
এ প্রসঙ্গ তুলে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ঈদের আগে হঠাৎ করে বাজার থেকে সয়াবিন তেল উধাও হয়ে গেল। আপনি (খুচরা ব্যবসায়ী) বললেন, তেল নাই। এখন সরকারি কর্মকর্তাদের অভিযানে গুদাম থেকে তেল বের হচ্ছে। এতে পুরো ব্যবসায়ী সমাজের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে।