মিলারদের কারসাজিতে হুহু করে বাড়ছে চালের দাম
পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: এপ্রিল ৮, ২০২০ , ৭:৩৬ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: Uncategorized,অর্থ ও বাণিজ্য
দিনের শেষে প্রতিবেদক : দেশে চালের পর্যাপ্ত মজুদ থাকার পরও গত নভেম্বর থেকেই মিলাররা কারসাজি করে চালের দাম বাড়াতে তৎপর হয়ে ওঠেন। এ ক্ষেত্রে তারা একেক সময় একেকটা অজুহাত দাঁড় করানোর চেষ্টা করছেন। সবশেষ করোনাকে অজুহাত হিসেবে দাঁড় করিয়ে খালি করছেন ক্রেতার পকেট। সরকারের একাধিক সংস্থার বাজার তদারকি উপেক্ষা করে ধানের বাড়তি দাম, বৈশাখে নতুন ধানের অপেক্ষা এবং করোনার অজুহাত সামনে রেখে মিলাররা গত এক মাসে মিল পর্যায়েই প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) চালে সর্বোচ্চ ৭০০ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়েছেন। এর প্রভাব পড়েছে রাজধানীর পাইকারি ও খুচরা বাজারে। ফলে করোনার এই দুর্দিনে চাল কিনতে দিশেহারা ভোক্তা। এদিকে রাজধানীর একাধিক খুচরা বাজার ও সরকারি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মূল্যতালিকা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, রাজধানীর খুচরা বাজারে এক মাসের ব্যবধানে প্রতি কেজি গরিবের চালে (মোটা চাল) ৮-১২ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ৫০ টাকা। এ ছাড়া নাজিরশাইল, মিনিকেট ও বিআর-২৮ চালে মাসের ব্যবধানে কেজিতে ৫-৬ টাকা বেড়েছে। বাজার সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, চালের দাম বাড়ায় খেটে খাওয়া মানুষের চাল কিনতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। করোনা ঠেকাতে সামাজিক দূরত্ববিধি মানতে গিয়ে কর্মহীন হয়ে পড়া নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে এমনিতেই টাকা নেই। তার ওপর বাড়তি দামে চাল কিনতে গিয়ে তারা হিমশিম খাচ্ছেন। দায় পড়ছে সরকারের ওপর। এদিকে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সরকার রাজধানীসহ সারা দেশে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ওএমএসের মাধ্যমে ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি শুরু করেছে। মঙ্গলবার খাদ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব বলছে, ১৫ মার্চ পর্যন্ত সরকারি গুদামে খাদ্যশস্যের মজুদের পরিমাণ ১৭ লাখ ৫১ হাজার টন। এর মধ্যে চাল ১৪ লাখ ২৯ হাজার টন এবং গম ৩ লাখ ২২ হাজার টন। এই মজুদ সন্তোষজনক। এ মুহূর্তে খাদ্যশস্যের কোনো ঘাটতি নেই বা আশঙ্কাও নেই। বাজারে কারসাজি বন্ধে সরকার ইতোমধ্যে নজরদারি বাড়ানোর কথা বলেছে। গঠন করা হয়েছে বিশেষ টিম। খোলা হয়েছে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলা হয়েছে, চালের বাজার অস্থিতিশীল করতে কেউ যদি কারসাজির চেষ্টা করে, তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেলের সদস্য আবদুল জব্বার মণ্ডল জানান, আমরা প্রতিদিন বাজার তদারকি করছি। এ সময় চালের দাম বাড়িয়ে বিক্রির দায়ে অনেক প্রতিষ্ঠানকে শাস্তির আওতায় আনছি। কোনো অনিয়ম পেলে ছাড় দেয়া হচ্ছে না। দাম সহনীয় রাখতে অভিযান চলমান আছে। আশা করি, কয়েকদিনের মধ্যে দাম কমে আসবে। রাজধানীর নয়াবাজার ও মালিবাগ কাঁচাবাজারের খুচরা চাল বিক্রেতারা বলছেন, মঙ্গলবার প্রতি কেজি মিনিকেট বিক্রি হয়েছে ৫৮-৬০ টাকা, এক মাস আগে ছিল ৫২-৫৫ টাকা। প্রতি কেজি নাজিরশাইল বিক্রি হয়েছে ৬০-৬৫ টাকা, এক মাস আগে ছিল ৫৫-৬০ টাকা। বিআর-২৮ বিক্রি হয়েছে ৪৮ টাকা, এক মাস আগে ছিল ৪২ টাকা। মোটা চাল স্বর্ণা বিক্রি হয়েছে ৪৫-৫০ টাকা, এক মাস আগে ছিল ৩৬-৩৭ টাকা। তবে নিুমানের স্বর্ণা কেজি ৪৩-৪৪ টাকা দরে বিক্রি হয়। রাজধানীর মালিবাগ কাঁচাবাজারের খালেক রাইস এজেন্সির মালিক ও খুচরা চাল বিক্রেতা দিদার হোসেন মঙ্গলবার বলেন, পাইকারি বাজারে চালের দাম বাড়তি। কারণ, পাইকাররাও মোকাম মালিকদের কাছ থেকে বেশি দরে চাল কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। এরই প্রভাব খুচরা বাজারে। এর পেছনে মিলারদের কারসাজি রয়েছে। রাজধানীর চালের আড়ত কারওয়ান বাজারের পাইকারি চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মঙ্গলবার প্রতি কেজি মিনিকেট পাইকারি বিক্রি হয়েছে ৫৫ টাকা, অথচ এক মাস আগে ছিল ৫১ টাকা। প্রতি কেজি নাজিরশাইল বিক্রি হয়েছে ৬৫ টাকা, এক মাস আগে ছিল ৫০ টাকা। বিআর-২৮ বিক্রি হয়েছে ৪৩ টাকা কেজি, এক মাস আগে ছিল ৩৬ টাকা। এ ছাড়া মোটা চালের মধ্যে প্রতি কেজি স্বর্ণা বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকা, এক মাস আগে ছিল ৩১ টাকা। কারওয়ান বাজারের পাইকারি আড়ত আল্লাহর দান রাইস এজেন্সির মালিক ও পাইকারি চাল ব্যবসায়ী সিদ্দিকুর রহমান বলেন, মিলারদের কারসাজি থামছে না। তারা সব ধরনের চালের দামই বাড়াচ্ছেন। তারা গত নভেম্বর থেকেই তিন ধরনের অজুহাত দিয়ে চালের দাম বাড়াচ্ছেন। প্রথম অজুহাত ধানের দর বাড়তি। দ্বিতীয় অজুহাত বৈশাখে নতুন চাল এলে সব ধরনের চালের দাম কমবে। এবার তৃতীয় অজুহাত হচ্ছে করোনায় আতঙ্কিত হয়ে ক্রেতারা চাল বেশি কিনেছেন। যে কারণে মিলে চাল সংকট। তাই চাহিদার তুলনায় সরবরাহ দিতে পারছেন না। এসবই মনগড়া। কারণ, দেশে পর্যাপ্ত চাল আছে। অতি মুনাফা লুটতেই এ কৌশল। এদিকে মঙ্গলবার নওগাঁ, দিনাজপুর ও কুষ্টিয়ায় চালের মোকামে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) নাজিরশাইল চাল বিক্রি হয়েছে ৩১০০ টাকা, এক মাস আগেও ছিল ২৪০০-২৪৫০ টাকা। এ ছাড়া প্রতি বস্তা মিনিকেট বিক্রি হয়েছে ২৬৫০ টাকা, এক মাস আগে ছিল ২৪৫০ টাকা। প্রতি বস্তা বিআর-২৮ বিক্রি হয়েছে ২০০০ টাকা, এক মাস আগে ছিল ১৮০০ টাকা। মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা জাতের চাল প্রতি বস্তা বিক্রি হয়েছে ১৯০০ টাকা, এক মাস আগে ছিল ১৪৫০ টাকা। এ প্রসঙ্গে কুষ্টিয়া জেলা চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন বলেন, আমরা মিল পর্যায়ে কোনো অজুহাত দেখিয়ে চালের দাম বাড়াইনি। কারণ, আমন মৌসুমে ধানের দাম বেশি ছিল। করোনায় আতঙ্কিত হয়ে ক্রেতারা বেশি চাল কেনায় মিল পর্যায়ে চালের ঘাটতি দেখা দেয়। তাই সর্বোপরি চালের দাম একটু বাড়তি। তবে আশার কথা হচ্ছে, এক মাস পর বৈশাখে বোরো ধান উঠবে। তখন চালের দাম কমে আসবে।কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, বর্তমানে চালের দাম বাড়া অযৌক্তিক। দেশে চালের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। আমন মৌসুমে ধানেরও বাম্পার ফলন হয়েছে। তাই সরকার ও সংশ্লিষ্টদের এর কারণ অনুসন্ধান করে দাম বাড়ানোর পেছনে দোষীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। এ ছাড়া দাম যেন আর না বাড়ে, সেই ব্যবস্থা নিতে হবে।