আজকের দিন তারিখ ২৫শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বুধবার, ১০ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
রাজনীতি যে কারণে স্থগিত হলো সিলেট জেলা বিএনপি’র সম্মেলন

যে কারণে স্থগিত হলো সিলেট জেলা বিএনপি’র সম্মেলন


পোস্ট করেছেন: delwer master | প্রকাশিত হয়েছে: মার্চ ২১, ২০২২ , ১১:১০ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: রাজনীতি


সিলেট প্রতিনিধি : সিলেট জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটির বয়স প্রায় আড়াই বছর। করোনা মহামারিসহ নানা কারণে কাউন্সিল ও নতুন কমিটি গঠন করা যায়নি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় ২১শে মার্চ সোমবার কাউন্সিল আয়োজনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছিল। সম্মেলনের একদিন আগে তা স্থগিত করা হয়েছে। হঠাৎ কেন সম্মেলন স্থগিত করা হয়েছে এ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। দলের নেতারা বলছেন, কাউন্সিলর তালিকা নিয়ে জটিলতার কারণে আপাতত সম্মেলন স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। দলের সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন বলেন, কাউন্সিলর তালিকা দেরিতে কেন্দ্রে জমা দেয়ায় জটিলতা তৈরি হয়েছে। তাই কাউন্সিলর আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। পরবর্তীতে আলোচনা করে নতুন তারিখ ঠিক করা হবে।

হাইকমান্ডের নির্দেশে গত দুই মাস আগে সিলেট বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটি কাজ শুরু করে। এর আওতাধীন ১৮টি ইউনিট। এই সময়ের মধ্যে ইউনিট সম্মেলন ও কাউন্সিল করেন আহ্বায়ক কমিটির নেতারা। এরপর ২১শে মার্চ তারা জেলা বিএনপি’র সম্মেলন ও কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু ভোটার তালিকা হালনাগাদ করতে বিলম্ব হওয়ার কারণেই সব প্রস্তুতি শেষ হওয়ার পর আগের দিন স্থগিত করা হলো সিলেট জেলা বিএনপি’র সম্মেলন ও কাউন্সিল। সিলেট জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদার নিজেও স্বীকার করেছেন- শনিবার রাতে ১৮টি ইউনিটের ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনকে তারা ভোটার তালিকা সমঝে দিয়েছেন। সিলেট বিএনপি’র এক শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন, মূলত ভোটার তালিকা চূড়ান্তকরণ নিয়ে বিতর্কের জের ধরেই হাইকমান্ডের নির্দেশে সম্মেলন স্থগিত করা হয়েছে। জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটির নেতারা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করার কথা ছিল। কিন্তু তারা সম্মেলন ও কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণার পরও ৩-৪টি ইউনিটের সম্মেলন ও কাউন্সিল করেন। সর্বশেষ গতকাল ভোরে বালাগঞ্জ উপজেলা বিএনপি’র পূর্ণাঙ্গ কমিটি চূড়ান্ত হওয়ার পর ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়। এর দু’দিন আগে সিলেট নগরে বসেই গঠন করা হয় জকিগঞ্জ বিএনপি’র কমিটি। বিয়ানীবাজারের কমিটিও প্রকাশ হয় দু’দিন আগে। ফলে ভোটার তালিকা নিয়ে খোদ প্রার্থীদের কাছেই ছিল নানা প্রশ্ন। বিষয়টি হাইকমান্ডের নজরে আসার পর গতকাল সম্মেলন স্থগিতের নির্দেশ দেয়া হয়। এদিকে সিলেট বিএনপি’র কাউন্সিলকে নিয়ে শেষ মুহূর্তে উত্তাপেরও আশঙ্কা ছিল। বিএনপি’র কয়েক জন নেতা জানিয়েছেন, ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করা নিয়ে গত শনিবার রাতে দুই সভাপতি প্রার্থীদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়েছে। বিলম্বে ভোটার তালিকা প্রণয়ন করায় প্রার্থীদের পাশাপাশি ভোটাররা ছিলেন ক্ষুব্ধ। এ কারণে সিলেট জেলা বিএনপি’র আজকের সম্মেলন স্থগিত করা হয়েছে। এবার সিলেট জেলা বিএনপি’র সভাপতি পদে হঠাৎই প্রার্থী হয়েছেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তার সঙ্গে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলেছিলেন সভাপতি প্রার্থী ও জেলার সাবেক সভাপতি আবুল কাহের শামীম ও যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি আব্দুল কাইয়ূম চৌধুরী। কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে সভাপতি পদের তিন প্রার্থী ছিলেন মুখোমুখি। এ ছাড়া, সাধারণ সম্পাদক পদে সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিএনপি নেতা কামরুল হাসান চৌধুরী ছিলেন প্রতিদ্বন্দ্বিতায়।

সাংগঠনিক সম্পাদক পদে সাবেক ছাত্রদল নেতা লোকমান আহমদ, শামীম আহমদও ছিলেন লড়াইয়ে। এদিকে- নির্বাচন স্থগিতের ঘোষণার পর থেমে গেছে প্রস্তুতি। সিলেটের আলীয়া মাদ্রাসা ময়দানে সম্মেলনের জন্য মঞ্চ নির্মাণের কাজ চলছিল। কাউন্সিলের জন্য বুথ নির্মাণ কাজ চলছিল। ঘোষণার পর কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। প্রচারণায় মাঠে থাকা প্রার্থীরাও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, ভোটার তালিকা প্রকাশের জন্য আমরা বার বার তাগাদা করেছি। কিন্তু অদৃশ্য কারণে সব কিছুতেই বিলম্ব করা হলো। কেন করা হলো- সেটি এখনো বোধগম্য নয়। তবে- সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী এমরান আহমদ চৌধুরী জানিয়েছেন, দলের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত। এবারের বিএনপি’র সম্মেলন ও কাউন্সিলকে ঘিরে তৃণমূলে ব্যাপক উৎসাহ দেখা দিয়েছে। সম্মেলন স্থগিত হলেও তিনি মাঠে থাকবেন।
তদন্ত কমিটি গঠন: কেন্দ্রের নির্দেশে স্থগিত করা হয়েছে সিলেট জেলা বিএনপি’র সম্মেলন ও কাউন্সিল। ভোটার তালিকা সময়মতো প্রকাশ না করায় এমনটি করা হয়েছে- বলছে দলীয় সূত্র। স্থগিতের পর ৭ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় বিএনপি। আগামী ২৭শে মার্চের মধ্যে এ কমিটিকে প্রতিবেদন কেন্দ্রে দাখিলের জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে ভোটার তালিকা যাচাই-বাছাই করবে তদন্ত কমিটি। তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন আহমেদ মিলনকে। তার সঙ্গে সদস্য হিসেবে রয়েছেন- সিলেট মহানগর বিএনপি’র আহ্বায়ক আব্দুল কাইয়ুম জালালী পংকী, মহানগর বিএনপি’র সাবেক সভাপতি নাসিম হোসাইন, সিলেট জেলা যুবদলের আহ্বায়ক সিদ্দিকুর রহমান পাপলু, মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক নজিবুর রহমান নজিব, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আব্দুল আহাদ খান জামাল ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আবদুল ওয়াহিদ সোহেল।