রাজশাহীর আরাফাত নিজ উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন গরুর খামার
পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: জুলাই ১৯, ২০২০ , ১:৫১ অপরাহ্ণ | বিভাগ: অর্থ ও বাণিজ্য
রাজশাহী প্রতিনিধি : ঈদুল আজহা সামনে রেখে অনেক গবাদিপশু খামারির কপালে যখন দুশ্চিন্তার ভাঁজ, মো. ইয়াসির আরাফাত তখন তরুণ খামারিদের পরামর্শ দিতে ব্যস্ত। ফেসবুকে তার পেজ সওদাগর অ্যাগ্রোতে প্রতিদিন তরুণ উদ্যোক্তারা যোগাযোগ করছেন। আরাফাতও ভাগাভাগি করে নিচ্ছেন নিজের অভিজ্ঞতা।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগে পড়েছেন ইয়াসির আরাফাত। অনেকের কাছেই তিনি আরাফাত রুবেল নামে পরিচিত। কখনো ছোটেননি চাকরির পেছনে। করেছেন অভিনব সব কাজ। এখন যেমন তিনি গরুর খামার ও ঘাষের চাষে ব্যস্ত। কীভাবে সমপরিমাণ খাবার ও পরিচর্যায় দেশি গরুর দ্বিগুণের বেশি মাংস উৎপাদন করা যায়, গরুকে খাওয়ানোর পাশাপাশি কীভাবে ঘাস থেকেও আয় করা যায়, এসব নিয়ে ভেবেছেন তিনি। এমনকি মাটি ছাড়াই নিজের বাসায় ঘাস চাষে সফল হয়েছেন। এখন তাঁর ঘরে বেড়ে উঠছে হাইড্রোফনিক ঘাস, মাঠে হচ্ছে চীন থেকে আনা দ্রুতবর্ধনশীল জারা-১ জাতের ঘাস, আর খামারে ব্রাহামা জাতের গরু।
রাজশাহী নগরের রামচন্দ্রপুর কালোমিস্ত্রির মোড়ে থাকেন আরাফাত। চারুকলার ছাত্র ছিলেন। সেই সুবাদে শিল্পী হিসেবে নিজের সৃজনশীলতাকে কাজে লাগিয়ে এর আগে গড়ে তুলেছিলেন আসবাব তৈরির একটি প্রতিষ্ঠান। সেই প্রতিষ্ঠানের আয় থেকে তিনি এবার ভিন্নধর্মী এ উদ্যোগ নিয়েছেন। শুরু করার আগে তিনি পাঁচ বছর দেশের বিভিন্ন এলাকায় বড় বড় খামার দেখতে গিয়েছেন। অভিজ্ঞতা নিয়েছেন। এরই মধ্যে গাজীপুরে ন্যাশনাল লাইভস্টক ট্রেনিং ইনস্টিটিউট থেকে ঘাস চাষ ও পশু পালনের ওপরে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। সবকিছু প্রস্তুত করে এক বছর আগে আনুষ্ঠানিকভাবে খামার চালু করেছেন। ২০১৮ সাল পর্যন্ত সরকারিভাবে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় গ্রাম পর্যায়ে প্রান্তিক কৃষক ও খামারিদের কাছে ব্রাহামা সিমেন্স বিনা মূল্যে বিতরণ করেছে। আরাফাত তাঁদের ঠিকানা জোগাড় করেন। তাদের বাড়ি থেকে ১২টি ব্রাহামা জাতের বাছুর সংগ্রহ করেন।
সুদূর ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, বরিশাল থেকেও তরুণেরা আরাফাতের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তার পরামর্শ নিয়ে, তার অনুপ্রেরণায় কেউ ঘাষ চাস শুরু করেছে, কেউ গবাদিপশু পালনের কথা ভাবছে। এ ছাড়া স্থানীয় খামারিরা তার কাছ থেকে ঘাসের কাটিং নিয়ে যাচ্ছেন। তরুণ এ উদ্যোক্তা বলছিলেন, ‘রাজশাহীর চরখিদিরপুরে অনেক খামারি আছেন, যারা শুধু গোচারণ ভূমিতে ছেড়ে দিয়ে গরু পোষেন। এমন কৃষকদের আমি বিনা মূল্যে ঘাসের কাটিং দিয়েছি। আমার ঘাস এখন সারা চরে ছড়িয়ে পড়েছে।’
আরাফাত খামারে পরীক্ষামূলকভাবে সমপরিমাণ খাবার দিচ্ছেন একটি দেশি গরুকে। দেখা যাচ্ছে, একই সময়ে একই পরিমাণ খাবার খেয়ে দেশি গরুর ওজন হয়েছে সর্বোচ্চ পাঁচ থেকে ছয় মণ। আর ব্রাহামার ওজন হয়েছে ১৫ মণ। তিনি বলছিলেন, ‘গ্রামের একজন ছোট খামারিও যদি এই পদ্ধতিতে ব্রাহামা জাতের গরু পালন শুরু করেন, তাহলে কম সময়ে ও কম খরচে তিনি বেশি লাভবান হবে। সারা দেশে আমি এই প্রযুক্তিতে পশুপালন আন্দোলনকে ছড়িয়ে দিতে চাই।’
আরাফাতের খামারে মোট গরু রয়েছে ২০টি, এর মধ্যে ১২টি ব্রাহামা জাতের। রাজশাহী নগরের সাহেব বাজার জিরো পয়েন্ট থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে, আবহাওয়া অফিসের পেছনে গেলেই আপনার চোখে পড়বে, একটি বাড়ির সামনে লেখা আছে সওদাগর অ্যাগ্রো। দেখতে আশপাশের আর পাঁচটা বাড়ির মতোই, কিন্তু ভেতরে ঢুকলে চোখে পড়ে অন্য চেহারা। একটি শেডের নিচে এক সারি ব্রাহামা জাতের ষাঁড়। আরাফাতের হিসাব অনুযায়ী, এরা সর্বোচ্চ ৪৩ ডিগ্রি তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে। তবু তার যত্নের শেষ নেই। সেদিন রাজশাহীর তাপমাত্রা ৪০–এর নিচেই ছিল। তবু ষাঁড়গুলোর মাথার ওপরে ছোট ছোট বৈদ্যুতিক পাখা লাগিয়ে দিয়েছেন। বাছুরের জন্য তার আলাদা শেড রয়েছে। সেখানে তুলনা করার জন্য একই বয়সী একটি দেশি ও ব্রাহামা জাতের বাছুর রয়েছে। তাদের একই পরিমাণ খাবার দেওয়া হয়েছে। কিন্তু চেহারাই বলে দিচ্ছে পার্থক্য। পরিপাটি এই খামারে অনেক্ষণ সময় কাটানো যায়।
গরুর বেচাবিক্রি নিয়ে ভাবছেন না ইয়াসির আরাফাত। যারা তার কাছ থেকে নিয়মিত পরামর্শ নেন, তারাই সওদাগর অ্যাগ্রোর নাম ছড়িয়ে দিয়েছেন। বিভিন্ন জায়গা থেকে শৌখিন ক্রেতারা এখন আরাফাতের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। তার একেকটি ষাঁড়ের ওজন হয়েছে প্রায় ১৫ মণ। তিনি ভাবছেন, এক বছর পরে এর ওজন হবে ২০ থেকে ২৫ মণ। তখন একজন শৌখিন ক্রেতা ১০ লাখ টাকার বেশি দামেও কিনতে পারেন। আরাফাত গরুর বাজারের খোঁজ রাখেন। এবার যুক্তরাষ্ট্র থেকে আনা ৩০ মণ ওজনের একটি ব্রাহামা ষাঁড় ৩৫ লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আরাফাত তার ষাঁড়গুলোকে সেই পর্যায়ে নিয়ে যেতে চান।