রোহিঙ্গা তহবিলে টান, অপরাধ বাড়ার শঙ্কা
পোস্ট করেছেন: dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: মার্চ ১৩, ২০২৩ , ৪:০৫ অপরাহ্ণ | বিভাগ: /////হাইলাইটস/////
দিনের শেষে প্রতিবেদক : বাংলাদেশে অবস্থানরত মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গাদের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগ কমে আসছে। এরই মধ্যে টান পড়েছে রোহিঙ্গা তহবিলে। আর রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা কমার কারণে অপরাধপ্রবণতা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন জনপ্রতিনিধিরা। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তহবিল ঘাটতির কারণে রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তার পরিমাণ কমাতে বাধ্য হয়েছে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)। রোহিঙ্গা সংকটের প্রায় ছয় বছরে এসে কক্সবাজারে অবস্থান করা রোহিঙ্গাদের জীবন রক্ষাকারী সহায়তার পরিমাণ কমিয়ে আনতে বাধ্য হয়েছে ডব্লিউএফপি। পহেলা মার্চ থেকে প্রত্যেক রোহিঙ্গার জন্য সহায়তার পরিমাণ ১২ ডলার থেকে কমিয়ে ১০ ডলার করা হয়। রাহিঙ্গারা বলছে, ক্রমান্বয়ে খাদ্য সহায়তা কমায় দুশ্চিন্তায় তারা। আন্তর্জাতিকভাবে মিয়ানমারকে চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে দ্রুত স্বদেশে প্রত্যাবাসন করার দাবি জানান রোহিঙ্গারা। উখিয়ার ক্যাম্প-৪ এর রোহিঙ্গা আসমা বলেন, আগে ৫ কেজি চিনি, ৫ কেজি ডাল নিতে পারতাম। এখন টাকা কমে গেছে মরিচও কিনতে পারি না। তারপর এখন চাল অন্যজনের কাছ থেকে ধার করে নিতে হবে। আরেক রোহিঙ্গা রফিক বলেন, মার্চে আগে ১২২০ টাকা করে খাদ্য সহায়তা পেতাম। কিন্তু এখন এক হাজার ২০ টাকার খাদ্য সহায়তা পাচ্ছি। এখন এভাবে খাদ্য সহায়তা কমলে আমরা খুবই কষ্ট পড়ে যাব। কারণ এর আগেও কোনো রকম কষ্ট করে চলতে হতো। সিরাজ নামের এক রোহিঙ্গা বলেন, আগে বাংলাদেশের মানুষসহ বিভিন্ন দেশের মানুষ এসে সহায়তা করত। তখন ভালো করে খাওয়া-দাওয়া করতে পেরেছিলাম। কিন্তু ২০১৮ সালের পর থেকে খাদ্য সহায়তা যে কমা শুরু করেছে সেটা আর বাড়ছে না। বিশেষ করে, ২০২৩ সালে খাদ্য সহায়তা আরও বেশি কমে গেছে। রোহিঙ্গাদের নিয়ে এমনিতে সবসময় আতঙ্কে থাকেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কিন্তু খাদ্য সহায়তা কমায় রোহিঙ্গাদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন জনপ্রতিনিধিরা। উখিয়ার কুতুপালংস্থ রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হেলাল উদ্দিন বলেন, রোহিঙ্গাদের খরচের পরিমাণ সেটি যখন কমে যাচ্ছে, তখন তারা বিভিন্ন ধরনের অপরাধে জড়িয়ে আয়ের উৎস ঠিক করবে। তখন স্থানীয় বাসিন্দাদের ওপর বেশি প্রভাব পড়বে বলে মনে করছি। উখিয়ার হলদিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস চৌধুরী বলেন, বন ও পাহাড় উজাড় হওয়ার পর খাদ্য সংকটের কারণে বন্যহাতিরা লোকালয়ে হানা দেয়। ঠিক তেমনি, রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা যেভাবে কমছে এতে রোহিঙ্গারা অল্প কিছুদিনের মধ্যে স্থানীয়দের ওপর আক্রমণ করার সম্ভাবনা রয়েছে। আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জোবায়ের বলেন, রোহিঙ্গারা কোনো দেশছাড়া মানুষ না। মিয়ানমার সেনাবাহিনী নির্যাতন করে আমাদের দেশছাড়া করেছে। তাই আন্তর্জাতিকভাবে মিয়ানমারকে চাপ প্রয়োগ করে দ্রুত স্বদেশে প্রত্যাবাসন করার দাবি জানাচ্ছি। আর শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. মিজানুর রহমান বলেন, এই পর্যায়ে এসে বরাদ্দ কমিয়ে দেয়া হলে রোহিঙ্গারা কাজের খোঁজে আরও মরিয়া হয়ে উঠবে। তাতে তাদের ক্যাম্পের মধ্যে রাখা আরও কঠিন হয়ে পড়বে। তবে সরকার রোহিঙ্গাদের স্বদেশে প্রত্যাবাসন করার চেষ্টায় রয়েছে। প্রত্যাবাসন না হওয়া পর্যন্ত রোহিঙ্গারা যাতে সম্মানের সঙ্গে বাঁচতে পারে, সেই ব্যবস্থার জন্য সরকার কাজ করছে । রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে মানবিক সহায়তার জন্য সমন্বয়কারী সংস্থা ইন্টার সেক্টর কো-অর্ডিনেশন গ্রুপের (আইএসসিজি) তথ্য অনুযায়ী, মূলত ২০১৯ সাল থেকেই ধারাবাহিকভাবে কমে আসছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অর্থ সহায়তা। ২০১৯ সালে ৯২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার চেয়ে পাওয়া গিয়েছিল ৬৯২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২০ সালে ১০৫৮ মিলিয়ন ডলার চেয়ে পাওয়া গেছে ৬৮৪ মিলিয়ন ডলার। ২০২১ সালে ৯৪৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার চেয়ে পাওয়া গেছে ৬৭৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর চলতি বছরের শুরু থেকেই কিছু বেসরকারি সংস্থা মানবিক কিছু কর্মসূচি বন্ধ করার বিষয়টি নিজ নিজ কর্মীদের জানিয়েছে। মূলত ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই এমন ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছিল। কিছু প্রকল্পের জন্য দাতাদের অর্থ পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণেই বন্ধ হচ্ছে কিছু কর্মসূচি, এমনটা বলছেন সংশ্লিষ্টরা। উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৫ অগাস্ট মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের পর কয়েক মাসে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়। এর আগে বাংলাদেশে ছিল আরও কয়েক লাখ রোহিঙ্গা। বর্তমানে ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ ক্যাম্পগুলোতে বসবাস করছেন। সূত্র : সময়টিভি