লকডাউন দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে প্রবাসী কর্মীদের
পোস্ট করেছেন: dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: জুন ২৯, ২০২১ , ১:২০ অপরাহ্ণ | বিভাগ: /////হাইলাইটস/////
দিনের শেষে প্রতিবেদক : করোনা সংক্রমণ রোধে ১ জুলাই থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত সারাদেশে সর্বাত্মক লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এসময় জরুরি সার্ভিসে কর্মরতদের ছাড়া কাউকেই ঘরের বাইরে আসতে দেওয়া হবে না। প্রজ্ঞাপন জারি না হলেও প্রবাসী কর্মীদের কাজে ফেরা নিশ্চিত করতে এ সময়ে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ না করার পক্ষে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। তবে সুনির্দিষ্ট ঘোষণা না আসায় দুশ্চিন্তায় প্রবাসী কর্মীরা। তাদের প্রশ্ন, বিদেশে যাওয়ার আগে করোনা টেস্ট, ফ্লাইটের টিকিট রি-ইস্যু, বিমানবন্দরে কীভাবে যাবেন তারা। যারা দেশে আসবেন, তারা কীভাবে বিমানবন্দর থেকে বাড়িতে ফিরবেন। অভিবাসন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের স্বার্থে বিদেশগামী কর্মীদের এবং তাদের সেবা প্রদানের জন্য সীমিত পরিসরে হলেও বিএমইটি, পাসপোর্ট অফিস ও রিক্রুটিং এজেন্সিকে লকডাউনের আওতাবহির্ভূত রাখা প্রয়োজন। একইসঙ্গে তাদের চলাচলে জন্য যানবাহন বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া।
সৌদি আরবে যেতে হলে এখন একজন প্রবাসী কর্মীকে ৭২ ঘণ্টা আগে এয়ারলাইন্স অথবা ট্রাভেল এজেন্সির অফিসে টিকিট রি-ইস্যুর পাশাপাশি কোয়ারেন্টিনের হোটেল বুক করতে হয়। একইসঙ্গে দেশটিতে পৌঁছানোর ৭২ ঘণ্টার মধ্যে করোনা পরীক্ষা করতে হচ্ছে। বেশিরভাগ প্রবাসীকে ঢাকায় এসে এসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হচ্ছে। সৌদি আরবগামী প্রবাসী কর্মীদের প্রশ্ন, লকডাউনে ট্রাভেল এজেন্সির অফিস খোলা থাকবে তো? যান চলাচল না করলে তারা কীভাবে যাতায়াত করবেন? এসময়ে পথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কীভাবে নিশ্চিত হবে তিনি প্রবাসী কর্মী, টিকিট বুকিং কিংবা করোনা পরীক্ষার জন্য যাতায়াত করছেন?
৩০ মে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিদেশ গমনেচ্ছু কর্মীদের পাসপোর্টের মেয়াদ ৬ মাসের কম থাকলে বিমানের টিকিট ইস্যু না করার বিষয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। তাই পাসপোর্টের মেয়াদ ৬ মাসের কম থাকলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে পাসপোর্ট নবায়ন বা নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে বিদেশ গমনেচ্ছু কর্মীদের তাগিদ দিয়েছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। সরকারের এ নির্দেশনায় নতুন করে ভোগান্তি বেড়েছে প্রবাসী কর্মীদের। যাদের পাসপোর্টের মেয়াদ ৬ মাসের কম, তারা এখন ছুটছেন পাসপোর্ট অফিসে, লকডাউনে পাসপোর্ট অফিস বন্ধ থাকলে অনেক প্রবাসী কর্মী ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে পাসপোর্ট না পাওয়ার কারণে বেকার হবেন।
রিক্রুটিং এজেন্সি ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশন অফ বাংলাদেশের (রাওব) সভাপতি ফখরুল ইসলাম বলেন, করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দেশব্যাপী লকডাউন হবে, জনগণের স্বার্থে সরকারের এ সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। তবে ইতোমধ্যেই কয়েক হাজার কর্মী তাদের ভিসা, এয়ার টিকিট, ইনস্যুরেন্স, কোয়ারেন্টিনের জন্য অফেরতযোগ্য হোটেল বুকিং নিশ্চিত করে শুধু ফ্লাইটের দিনক্ষণের জন্য অপেক্ষায় আছেন। অধিকন্তু হাজার হাজার কর্মীর অনেকের ভিসা স্ট্যাম্পিং, অনেকের আবার বহির্গমন ছাড়পত্রও (স্মার্ট কার্ড) সম্পন্ন করা হয়েছে। আমরা আশা করছি, প্রবাসী কর্মীদের স্বার্থে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু থাকবে। একইসঙ্গে এ সেক্টরকে জরুরি সেবা খাত হিসাবে বিবেচনায় নিয়ে লকডাউনের আওতামুক্ত রাখতে হবে। বিদেশগামী প্রবাসী কর্মীরা ও সংশ্লিষ্টরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে এয়ারপোর্টসহ প্রয়োজনীয় জায়গায় যাতায়াত করতে পারে সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করা দরকার। দেশের স্বার্থে বিদেশগামী কর্মীদের এবং তাদের সেবা প্রদানের জন্য সীমিত পরিসরে হলেও বিএমইটি, পাসপোর্ট অফিস ও রিক্রুটিং এজেন্সিকে লকডাউনের আওতাবহির্ভূত রাখার দাবি আমরা জানাচ্ছি।
স্পেনে থাকেন অন্বেষা শিবা। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ১২ জুলাই স্পেন থেকে দেশে আসবো। এর আগে বেশ কয়েকবার ফ্লাইটের টিকিট বুক করলেও নানা রকম বিধিনিষেধের কারণে আসতে পারিনি। আমার বাড়ি চট্টগ্রাম এবং ঢাকায় কেউ নেই। এই অবস্থায় আমি একা মেয়ে কীভাবে বাড়ি যাবো ঢাকা থেকে? অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট চালু থাকলে অল্প সময়ে নিরাপদে বাড়িতে চলে যেতে পারবো। এসব বিবেচনায় রেখে সরকার সিদ্ধান্ত নিলে আমাদের জন্য সুবিধা হবে।
সৌদি প্রবাসী মহিবুল্লাহ রাসেল বলেন, আমার স্ত্রী এবং ছোট বাচ্চা সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশে যাবে। তাদের এয়ারপোর্ট থেকে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমার ছোট ভাই কুমিল্লা থেকে রিজার্ভ গাড়ি নিয়ে ঢাকায় যাবে। লকডাউন চলাকালীন কুমিল্লা থেকে গাড়ি নিয়ে আসার ক্ষেত্রে তাদের কি আটকে দেবে? আমার ভাই বিমানবন্দরে যেয়ে তাদের না আনালে তো আমার স্ত্রীর পক্ষে একা বাচ্চা নিয়ে বাড়িতে ফেরা সম্ভব হবে না। এসব বিষয়ে সরকারের সঠিক পদক্ষেপ প্রয়োজন।
এ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, প্রবাসীদের বিষয়টি গুরুত্বসহ আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় উপস্থাপন করা হয়েছে। প্রবাসী কর্মীদের ফ্লাইট চালু, যাতায়াত ও তাদের সেবার বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে সকল সংস্থার সহায়তা যেন মাঠ পর্যায়ে থাকে সে বিষয়ে সুপারিশও করা হয়েছে। আমরা আশা করছি, প্রজ্ঞাপনে এ বিষয়গুলো নির্দেশনা আকারে আসবে।