লকডাউন শিথিল: গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি ও শৃঙ্খলা নিশ্চিত জরুরি
পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: আগস্ট ১২, ২০২১ , ১১:৩৯ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: সম্পাদকীয়
দীর্ঘদিন কঠোর বিধিনিষেধের পর গতকাল থেকে সবকিছু চালু হয়েছে। শর্তসাপেক্ষে সব ধরনের অফিস ও দোকান খুলছে। গণপরিবহনও চলাচল করছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিবহন চালানোর বিষয়টি আবারো সামনে আসছে। গণমাধ্যমে খবর আসছে, পরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। যাত্রী এবং বাস শ্রমিকদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটছে। পরিবহন সেক্টরে এমন নৈরাজ্য নতুন নয়। সবসময় দেখতে পাই। বিআরটিএর নির্দেশনা দিয়েছেÑ আসন সংখ্যার অতিরিক্ত কোনো যাত্রী পরিবহন করা যাবে না এবং দাঁড় করিয়ে কোনো যাত্রী বহন করা যাবে না। আগের ভাড়ায় গণপরিবহন চলবে; ৬০ শতাংশ বর্ধিত ভাড়া প্রযোজ্য হবে না। আসন পূর্ণ করে পরিবহন চালাতে পারবে। তবে কোনোভাবেই দাঁড়িয়ে বা আসনের অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন করতে পারবে না। বিআরটিএ বলেছে, গণপরিবহনের যাত্রী, চালক, সুপারভাইজার ও কন্ডাক্টর, চালকের সহকারী এবং টিকেট বিক্রির কাজে জড়িত প্রত্যেককে মাস্ক পরতে হবে। রাখতে হবে প্রয়োজনীয় হ্যান্ড স্যানিটাইজার। যাত্রার শুরু এবং শেষে যানবাহন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার পাশাপাশি জীবাণুনাশক দিয়ে যানবাহন জীবাণুমুক্ত করতে হবে। এর বাইরে সরকার ঘোষিত অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিবহন চালাতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মানার ঘোষণা কাগজ-কলমে সীমাবদ্ধ। গত বছর করোনা ভাইরাস থেকে সুরক্ষার অংশ হিসেবে গণপরিবহনে দীর্ঘদিন অর্ধেক আসন খালি থাকার শর্তে ৬০ ভাগ ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে এক ধরনের নৈরাজ্য আমরা দেখেছি। এখন সে ভাড়া প্রত্যাহার করা হয়েছে। এরপরও বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমন নৈরাজ্যের নিরসন জরুরি। ঢাকা শহরের প্রায় ২ কোটি মানুষের ৮০ ভাগই নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র শ্রেণিভুক্ত। এরা গণপরিবহনের ওপর নির্ভরশীল। করোনাকালীন এই দুঃসময়ে সাধারণ মানুষের এই নির্ভরশীলতাকে পুঁজি করে পরিবহন মালিকরা বাড়তি ভাড়া আদায় করছেন। এতে করে সকালবেলা ঘর থেকে বেরিয়ে অফিসমুখী বাস ধরতে গিয়ে প্রতিদিনই অনাকাক্সিক্ষত বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন কর্মজীবী মানুষ। পরিবহন খাতে এই নৈরাজ্য দিনের পর দিন চলতে পারে না। দেশে দিন দিন করোনা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। এ অবস্থায় করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গণপরিবহন চলাচলে বিধিনিষেধসহ নানা নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। করোনা দুর্যোগের কারণে এ সময়ে গণপরিবহনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ স্বাস্থ্য সতর্কতা অবলম্বন। গণপরিবহনগুলোতে গাদাগাদি করে যাত্রী নেয়ার নিয়ম না থাকলেও তা কমই কার্যকর হতে দেখা যায়। অন্তত এ সময়ের জন্য হলেও নির্দিষ্ট আসনের অতিরিক্ত যাত্রী নেয়ার প্রবণতা বন্ধ করতেই হবে। পাশাপাশি সংকটে গণপরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়ার ভোগান্তিটা যাত্রীসাধারণকে যেন পোহাতে না হয় সেদিকেও নজর দিতে হবে। যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে তা পুষিয়ে নেন পরিবহন মালিকরা। সরকারকে সংঘবদ্ধ এই চক্রকে প্রতিহত করতে এগিয়ে আসতে হবে। যাত্রীসাধারণের বৃহত্তর স্বার্থেই অবিলম্বে এই অবৈধ চাঁদাবাজি বন্ধ করা উচিত বলে আমরা মনে করি। কেবল সরকারের সতর্কতাই যথেষ্ট নয় বরং আমরা মনে করি, বাস মালিক সমিতিসহ চালক ও যাত্রী সবারই সচেতন হওয়া জরুরি। গণপরিবহনে যাত্রী ওঠার ক্ষেত্রে যেভাবে হুড়াহুড়ি করে বাসে উঠতে দেখা যায়, তা বন্ধ করতে হবে।