লাগামছাড়া পণ্যের দাম, ত্রাণ দিতে বিপাকে সংশ্লিষ্টরা
পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: এপ্রিল ১৬, ২০২০ , ৬:৪৪ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: অর্থ ও বাণিজ্য
দিনের শেষে প্রতিবেদক : উন্নয়ন সাংবাদিকদের সংগঠন ডেভেলপমেন্ট জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ (ডিজেএফবি)-এর পক্ষ থেকে অসহায় ৬০টি পরিবারকে উপহার সামগ্রী দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়। প্রত্যেক পরিবারকে ৫ কেজি চাল, দুই কেজি আলু, আধা কেজি ডাল ও আধা কেজি পেঁয়াজ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এজন্য মোট বাজেট ধরা হয় ২০ হাজার টাকা। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সোমবার (১৩ এপ্রিল) আগারগাঁও বিএনপি বাজারে যায় সংগঠন সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু নিত্যপণ্যের বাজারে গিয়ে তারা দেখতে পান পেঁয়াজ, আলু ও মসুর ডালের দাম আকাশচুম্বী। প্রতি কেজি মোটা চালে বেড়েছে ১০ টাকা। এছাড়া পেঁয়াজের দামও কেজি প্রতি বেড়েছে ২০টাকা। এমনকি আলুর দামও কেজি প্রতি ৫ থেকে ৭ টাকা বেড়েছে। ফলে ৬০টির পরিবর্তে ৫০টি পরিবারকে উপহার সামগ্রী দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তারা। ডিজেএফবি’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মামুন আবদুল্লাহ বলেন, আমরা প্রথমে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম ৬০টি পরিবারকে নিত্যপণ্য উপহার দেবো। সেই হিসেবে টাকা দিয়েছিলাম সবাই নিজ উদ্যোগে। তবে বাজারে এসে দেখি চাল, ডাল ও আলুর দাম বাড়তি। এই জন্য পরে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ৫০ পরিবারকে দেওয়া হয়। সরকারের উচিত এসব নিত্যপণ্যের দামের লাগাম টেনে ধরা। তা না হলে গরিব মানুষদের জন্য বড় বিপদ। যারা ত্রাণ সামগ্রী দিচ্ছেন, দাম বেশি হলে নিরুৎসাহিত হবেন। কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে মোটা চাল, মসুর ডাল, পেঁয়াজ, আধা লিটার বোতলজাত তেল ও আলুর দাম ‘লকডাউন’র পর থেকেই বাড়তে শুরু করেছে। এক টাকা দুই টাকা করে বাড়তে বাড়তে এখন ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। ত্রাণ দেওয়ার কারণে বর্তমানে এই সব পণ্যের চাহিদাও বেশি। যেমন আগে প্রতি কেজি আটাশ মোটা চালের দাম ছিল ৩৪ থেকে ৩৫ টাকা। অথচ এই চালের দাম এখন বেড়ে হয়েছে ৪৪ থেকে ৪৫ টাকা। অর্থাৎ কেজি প্রতি ১০ টাকা বেড়েছে। একই সময়ে ৭ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি আলু ২৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ৪৫ টাকা কেজি দরের পেঁয়াজ এখন ৫৫ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ফলে প্রতি কেজি পেঁয়াজে দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা বাড়ছে। চাহিদা বেশি থাকায় ৫০ টাকা দরের আধা লিটার তেলের দাম ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মোটা মসুর ডালের দাম কেজি প্রতি ১০ টাকা বেড়ে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা হয়েছে। এসব পণ্যের দাম বৃদ্ধির প্রসঙ্গে জব্বার মুদি দোকানির মালিক সাইফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ত্রাণ দেওয়া পণ্যগুলোর চাহিদা বেশি, দামও বেশি। চাহিদার তুলনায় এসব পণ্যের সরবরাহও কম। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাজারে পণ্য সরবরাহ ঘাটতি কথাটি মোটেও সত্য না। চাল ও ডাল পর্যাপ্ত রয়েছে। তবে ত্রাণে বেশি ব্যবহার হচ্ছে বলে কিছু সুযোগ সন্ধানী এর অব্যবহার করছে। বর্তমানে চাল ও ডালসহ নিত্যপণ্যের মিলগুলো চালু রয়েছে। সুতরাং এসব পণ্যের দাম বৃদ্ধির কথা নয়। এমনকি মোটা চাল, পেঁয়াজ, মসুর ডাল, তেল, পেঁয়াজ ও আলু পর্যাপ্ত রয়েছে। সাপ্লাই চেইনেও সমস্যা নেই। করোনা ভাইরাসের সময় এসব পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে ঢাকায় ২৮টি এবং সারা দেশে ৫৬টি মনিটরিং টিম আছে। তারপরও কোনো ব্যবসায়ী লুকোচুরি করলে বা ক্রেতা ঠকালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব(প্রশাসন) মো. ওবায়দুল আজম বলেন, বর্তমানে কোন পণ্যের সংকট নেই। সকল পণ্যই পর্যাপ্ত রয়েছে। তারপরও যদি কোন ব্যবসায়ী বলেন সরবরাহে ঘাটতি, তবে এটা শতভাগ মিথ্যা কথা। বাজারে মোটা চাল পর্যাপ্ত রয়েছে। চাল ও ডালের মিল চালু আছে। সাপ্লাই চেনও ঠিক আছে। এসব পণ্যেরে দাম বৃদ্ধির প্রশ্নই আসে না। তিনি আরো বলেন, বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। পণ্যের সংকট নাই। তারপরও মানুষের এই সংকটে যদি কতিপয় ব্যবসায়ীর নৈতিকতা না থাকে। এটা দুর্ভাগ্যজনক। তারপরও আমরা মাঠে আছি অন্যায় পেলেই জরিমানা করা হচ্ছে।