আজকের দিন তারিখ ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রবিবার, ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
অর্থ ও বাণিজ্য লোকসান মুক্ত রাখতে যেভাবে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করবেন

লোকসান মুক্ত রাখতে যেভাবে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করবেন


পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: জুলাই ১৭, ২০২১ , ১২:৪১ অপরাহ্ণ | বিভাগ: অর্থ ও বাণিজ্য


দিনের শেষে প্রতিবেদক : পুঁজিবাজার যেমন অনেক লাভের জায়গা, তেমনি অনেক লোকসানের জায়গাও। এখানে মুনাফা যেমন রাতারাতি হয়, লোকসানও তেমিন রাতারাতি হয়। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে হলে ভেবেচিন্তে বিনিয়োগ করতে হয়। এজন্য বলা হয়, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ সবার জন্য নয়। এখানে বিনিয়োগ করতে হলে বাজার সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান থাকা আবশ্যক। যদিও আমাদের দেশের পুঁজিবাজারে বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী বাজার সম্পর্কে সম্যক ধারণা না নিয়েই বিনিয়োগ করে থাকেন। তাই সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য কতিপয় পরমার্শ নিচে তুলে ধরা হলো। এসব পরামর্শ মেনে পুঁজিবাজার বিনিয়োগ করলে লোকসান হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম থাকমবে এবং মুনাফা করার সুযোগ বেশি হবে।
ঋণ করে পুঁবিজারে বিনিয়োগ নয় : কখনো ঋণ করে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করবেন না। কারণ পুঁজিাবাজারে বিনিয়োগ এমনিতেই ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ। যেকোনো ঋণ পুঁজিবাজারের ঝুঁকিকে আরও বাড়িয়ে দেয়। ঋণ করে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করলে দুই ধরনের ঝুঁকি তৈরি হয়। প্রথমত সুদের হারের ঝুঁকি, অন্যটি মূলধন হারানোর ঝুঁকি। সাধারণত তারাই পুঁজিবাজারে ঋণ করে লাভ করতে পারেন, যাঁদের বাজার সম্পর্কে যথেষ্ট অভিজ্ঞতা রয়েছে। কারণ তাঁরা জানেন কখন, কী পরিমাণ ও কোন শেয়ারের বিপরীতে ঋণ নেওয়া যায়। আবার কখন ঋণ থেকে বেরিয়ে যেতে হবে।
ঋণমুক্ত কোম্পানিতে বিনিয়োগ করুন : যদি আপনি নতুন করে বিনিয়োগের কথা ভাবেন, তাহলে পরামর্শ হলো তালিকাভুক্ত যেসব কোম্পানির স্থিতিপত্র বা ব্যালান্সশিটে ঋণের দায় তুলনামূলক কম, সেসব কোম্পানিতেই বিনিয়োগ করুন। যে কোম্পানির ঋণ যত বেশি, সেই কোম্পানির মুনাফার ওপর তত বেশি চাপ থাকে। কারণ, মুনাফার একটি বড় অংশ সুদ পরিশোধে ব্যয় করতে হয়। ঋণের দায় কম এমন কোম্পানি বাছাই করার ক্ষেত্রে সাত–আট বছরের স্থিতিপত্র ভালোভাবে পর্যালোচনা করুন। যদি দেখেন, কোম্পানিটির ঋণের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম বা পুরোনো ব্যাংকঋণ ক্রমাগতভাবে কমে আসছে, তাহলে বুঝবেন কোম্পানিটির নিজস্ব আর্থিক ভিত্তি বেশ শক্তিশালী। কোম্পানি ব্যাংকঋণমুক্ত থাকলে অর্থনীতিতে খারাপ অবস্থা থাকলেও ওই কোম্পানির ব্যবসা খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। এ ছাড়া কম ব্যাংকঋণ আছে এমন কোম্পানি থেকে ভালো লভ্যাংশ পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বর্তমানে আমাদের বাজারে ভালো মৌলভিত্তির বেশ কিছু কোম্পানি রয়েছে, যাদের ব্যাংকঋণের পরিমাণ খুবই কম। তাই নিজেকে ঋণমুক্ত রাখার পাশাপাশি কম ঋণ আছে এমন কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করুন।
সঞ্চয়ের একটি অংশ পুঁজিবাজারে আনুন : আপনি যদি চাকরিজীবী হন, তাহলে মাস শেষে সব খরচ বাদ দেওয়ার পর হয়তো একটু একটু করে সঞ্চয়ের মাধ্যমে কিছু অর্থ জমিয়েছেন। সেই সঞ্চয়ের পুরোটা কখনো পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করবেন না। মাস শেষে নির্ধারিত হারে মুনাফা পাবেন এমন কিছু আর্থিক পণ্যে সঞ্চয়ের অর্ধেক অর্থ বিনিয়োগ করুন। বাকি অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে কিছুটা ভাগ্যবদলের ঝুঁকি নিতে পারেন। তবে সেই ঝুঁকি নেওয়ার আগে বাজার সম্পর্কে ন্যূনতম কিছু ধারণা থাকা চাই। আমাদের দেশে চাকরিজীবীদের জন্য সঞ্চয়ের সবচেয়ে লাভজনক বিনিয়োগ পণ্য এখন পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র। সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকে সুদহার কমানোর নানা চেষ্টা চলছে। যদি ঋণ-আমানতের সুদহার সত্যিই সত্যিই নয়-ছয়ে নেমে আসে, তাহলে ব্যাংকে টাকা রাখার বদলে পুঁজিবাজারে ভালো মৌলভিত্তির কোম্পানিতে বিনিয়োগ অনেক লাভজনক হবে। কারণ, তাতে অন্তত বছর শেষে ব্যাংকের চেয়ে বেশি মুনাফা পাওয়া যাবে। কিন্তু সেই বিনিয়োগের আগে ওপরের পরামর্শগুলো মেনে চললে আপনার ঝুঁকি কমে আসবে বলে মনে করি।
কোম্পানির উদ্যোক্তা ও ব্যবস্থাপকদের জানুন : আমাদের মতো দেশে কোনো কোম্পানিতে বিনিয়োগের আগে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত ওই কোম্পানির উদ্যোক্তা কারা, ওই কোম্পানির ব্যবস্থাপনায় কারা রয়েছেন। কারণ, আপনার বিনিয়োগের লাভ-ক্ষতি পুরোপুরি নির্ভর করছে তাঁদের ওপর। কোম্পানিগুলোর ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত নেন উদ্যোক্তা ও ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত শীর্ষ নির্বাহীরা মিলে। তাই সেই লোকগুলো কতটা পেশাদার, সমাজে কতটা গ্রহণযোগ্য, তাঁদের ব্যবসায়িক ঐতিহ্য ও অভিজ্ঞতা কী, তা জানা জরুরি। যদি দেখেন, উদ্যোক্তা ও ব্যবস্থাপকদের সফল ও লাভজনকভাবে ব্যবসা পরিচালনার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা রয়েছে, তবে সেই কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে আপনিও লাভের আশা করতে পারেন। অন্যথায় আপনার বিনিয়োগ শুরুতেই ঝুঁকিতে পড়বে। বিনিয়োগের আগে একটু ভালোভাবে খোঁজখবর নিলে উদ্যোক্তাদের সম্পর্কে ধারণা পাওয়া আপনার জন্য খুব কঠিন হবে না। যে কোম্পানির উদ্যোক্তা ও ব্যবস্থাপকেরা যত ভালো, সেই কোম্পানির আর্থিক স্বচ্ছতা ও সুশাসন তত উন্নত। তাই স্বচ্ছতা ও সুশাসন আপনার বিনিয়োগকে সুসংহত করবে।
দৈনন্দিন লেনদেন পরিহার করুন : আমাদের বাজারের বেশির ভাগ বিনিয়োগকারী শেয়ার কেনার পরদিন থেকেই লাভের আশায় থাকেন। দ্রুত মুনাফা করতে চান। এ ধরনের মানসিকতা নিয়ে বাজারে বিনিয়োগ করে শেষ বিচারে লাভবান হওয়া যায় না। হয়তো সাময়িকভাবে কেউ কেউ কোনো কোনো শেয়ারে অল্প সময়ে ভালো মুনাফা করেন ঠিকই, কিন্তু তার চেয়ে বেশি লোকসান করেন শেষ হিসাবে। সেজন্য কিছুটা হলেও দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ করুন।
পিই রেশিও ও এনএভি দেখে শেয়ার কিনুন : শেয়ার কেনার আগে ঐ শেয়ারের মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) এবং শেয়ারটির নীট সম্পদ মূল্য (এনএভি) দেখুন। এটি পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের পূর্বশর্ত। পিই রেশিও নির্ধারিত হয় কোম্পানির আয় বা মুনাফার উপর। আর এনএভি নির্ধারিত হয় কোম্পানির আর্থিক ভিত্তি ও সক্ষমতার উপর। সুতরাং বিনিয়োগের আগে এই দুই বিষয় বিবেচনা করতে হবে। সবচেয়ে কম পিই রেশিওর শেয়ারে এবং বাজার মূল্যের চেয়ে বেশি সম্পদ রয়েছে এমন শেয়ারে বিনিয়োগ করতে হবে।