লোকসান সত্বেও খাদ্য খাতের ৬ কোম্পানির অস্বাভাবিক উত্থান
পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: আগস্ট ২৯, ২০২১ , ১১:৩৮ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: অর্থ ও বাণিজ্য
দিনের শেষে প্রতিবেদক : ধারাবাহিকভাবে লোকসান এবং পুঁঞ্জিভুত লোকসান সত্বেও অস্বাভাবিক হারে দর বেড়ে চলেছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের ৬ কোম্পানির। সেগুলো হলো- জিলবাংলা সুগার, শ্যামপুর সুগার, মেঘনা কনডেন্স মিল্ক, মেঘনা পেট, রহিমা ফুড কর্পোরেশন ও জেমিনি সি ফুড।
এর মধ্যে জেমিনি সি ফুড ছাড়া বাকি কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্তির পর বিনিয়োগকারীদের কোনো ডিভিডেন্ড দেয়নি। তবুও গত তিন মাসের ব্যবধানে এসব কোম্পানির দর ১০০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। প্রায় প্রতিদিনই কোম্পানিগুলোর শেয়ার সর্বোচ্চ দরে লেনদেন হচ্ছে। জুন ক্লোজিং হওয়া কোম্পানিগুলো এই বছর ডিভিডেন্ড দেয়া নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। কারণ প্রতিবছরের মতই তিনটি প্রান্তিকেই কোম্পানিগুলো লোকসান দেখিয়েছে। এরপরও কোম্পানিগুলোর দর বাড়ায় নিয়ন্ত্রক সংস্থার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বাজারসংশ্লিষ্টরা ও বিনিয়োগকারীরা।
বাজার সংশ্লিষ্টরা ও বিনিয়োগকারীরা বলছেন, বাজারে এত ভালো ভালো কোম্পানি থাকা সত্বেও কারা এসব দুর্বল ও ঝুঁকিপুর্ণ শেয়ারে বিনিয়োগ করছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা কেন এ বিষয়ে কোনো ইতিবাচক পদক্ষেপ নিচ্ছেনা সেটাই অবাক করার বিষয়। তাঁরা বলছেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দায়িত্ব কি শুধু আইপিও অনুমোদন করা? আর কিছু কোম্পানিকে দায়সারা জরিমানা করা? নিয়ন্ত্রক সংস্থা যদি এই বিষয়ে কোনো কার্যকরি পদক্ষেপ নিতে না নেয়, তাহলে তা হবে পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতার পথে বড় অন্তরায়।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত তিন মাসে সবচেয়ে উচ্চমূল্যে বিক্রি হয়েছে মেঘনা পেট এর শেয়ার। কোম্পানিটির শেয়ার গত জুন ২০২১ থেকে ধারাবাহিকভাবে ঊর্ধ্বমুখী ধারায় রয়েছে। গত ২১ জুন কোম্পানিটির শেয়ার ১১ টাকা ১০ পয়সা থেকে বেড়ে আগস্ট এ এসে ২৯ টাকা ৭০ পয়সায় এসে দাঁড়িয়েছে। বিগত তিন মাসে প্রায় ১৬৭.৫৬ শতাংশ বেড়েছে শেয়ারটির দর। ২০০১ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের কোম্পানি মেঘনা পেটের অনুমোদিত মূলধন ৩০ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ১২ কোটি টাকা। কোম্পানির পুঞ্জিভূত লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৭ কোটি ৬ লাখ টাকা। ২০২০ সালে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৩০ পয়সা। ২০২১ সালে এসেও কোম্পানিটি লোকসান দিয়ে চলেছে। তৃতীয় প্রান্তিক (জুলাই’২০-মার্চ’২১) ২০ পয়সা লোকসান দিয়েছে। ফলে কোম্পানিটি এই বছরও বিনিয়োগকারীদের ডিভিডেন্ড দিতে পারবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
মেঘনা কনডেন্স মিল্ক : ধারবাহিক লোকসান সত্বেও কোম্পানিটির শেয়ার দর গত জুন ২০২১ থেকে ধারাবাহিকভাবে ঊর্ধ্বমুখী ধারায় রয়েছে। গত ২১ জুন কোম্পানিটির শেয়ার ১১ টাকা থেকে বেড়ে আগস্টে ২৩ টাকা ২০ পয়সায় উঠেছে। গত তিন মাসে প্রায় ১১০ শতাংশ বেড়েছে এই কোম্পানির শেয়ার দর। ২০০১ সালে তালিকাভুক্ত এই কোম্পানির অনুমোদিত মূলধন ৮০ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ১৬ কোটি টাকা। কোম্পানিটির পুঞ্জিভূত লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১১১ কোটি ২৭ লাখ টাকা। এভাবে চলতে থাকলে অচিরেই কোম্পানিটি দেউলিয়া হয়ে যেতে পারে। তালিকাভুক্তির পরবর্তী সময় থেকে অব্যাহতভাবে লোকসান দেওয়ার কারণে আজও বিনিয়োগকারীদের কোন ডিভিডেন্ড দিতে পারেনি। ২০২০ সালে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছিল ৭ টাকা ৬৭ পয়সা। ২০২১ সালেও কোম্পানিটি ধারাবাহিক লোকসান দিয়ে যাচ্ছে। তৃতীয় প্রান্তিক (জুলাই-২০-মার্চ ২১) ৫ টাকা ২৭ পয়সা লোকসান দিয়েছে। ফলে কোম্পানিটি এ বছরও বিনিয়োগকারীদের ডিভিডেন্ড দিতে পারবে না বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে
শ্যামপুর সুগার : এই কোম্পানির শেয়ার গত জুন ২০২১ থেকে ধারাবাহিকভাবে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় রয়েছে। গত জুন ২১ এ কোম্পানির শেয়ার ৪৭ টাকা ৫০ পয়সা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে আগস্ট মাসে ১০৫ টাকা ৭০ পয়সায় হাঁকিয়েছে। গত তিন মাসে কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে প্রায় ১২২.৫২ শতাংশ। ‘জেড’ ক্যাটাগরির কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ৫০ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ৫ কোটি টাকা। শেয়ারবাজার বিশ্লেষকদের মতে, প্রতি বছর কোম্পানিটির দায়, ঋণ ও সুদের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কোম্পানির পুঞ্জিভূত লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৯৯ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। কোম্পানির মোট ৫০ লাখ শেয়ারের মধ্যে সরকারি বিনিয়োগ রয়েছে ৫১ শতাংশ। এর মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ১.৯১ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে ৪৭.০৯ শতাংশ শেয়ার। কোম্পানিটি তালিকাভুক্তির পর থেকে ধারাবাহিক লোকসান দিয়ে যাচ্ছে। ফলে আজও বিনিয়োগকারীদের কোন ডিভিডেন্ড দিতে পারেনি। ২০২০ সালে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছিল ১২১ টাকা ৩৮ পয়সা। ২০২১ সালে এসেও কোম্পানিটি ধারাবাহিকভাবে লোকসান দিয়ে চলেছে। তৃতীয় প্রান্তিক (জুলাই-২০-মার্চ ২১) ৭৭ টাকা ৭০ পয়সা লোকসান দিয়েছে। ফলে কোম্পানিটি এ বছরও বিনিয়োগকারীদের ডিভিডেন্ড দিতে পারবে না বলে ধারনা করা হচ্ছে।
জিলবাংলা সুগার মিলস : এই কোম্পানির শেয়ার গত জুন ২০২১ থেকে ঊর্ধ্বমুখী ধারায় রয়েছে। গত জুন ২১ এ কোম্পানির শেয়ার ৯২ টাকা ৭০ পয়সা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে আগষ্টে এসে ১৮০ টাকা ৪০ পয়সায় উঠার পর দর সংশোধন শুরু হয়। গত তিন মাসে প্রায় ৯৪.৬০ শতাংশ বেড়েছে শেয়ারটির দর। ১৯৮৮ সালে তালিকাভুক্তি হওয়া এই কোম্পানির অনুমোদিত মূলধন ৫০ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ৬ কোটি টাকা। এর পুঞ্জিভূত লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪২৬ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। কোম্পানির মোট ৬০ লাখ শেয়ারের মধ্যে সরকারের ৫১ শতাংশ, প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ১২ দশমিক ২০ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে ৩৬.৮০ শতাংশ শেয়ার। কোম্পানিটি তালিকাভুক্তির পর থেকে ধারাবাহিক লোকসান দিয়ে চলেছে। তালিকাভুক্তির পর থেকে আজও বিনিয়োগকারীদের কোন ডিভিডেন্ড দিতে পারেনি। ২০২০ সালে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছিল ৯৩ টাকা ৬৯ পয়সা। ২০২১ সালে এসেও কোম্পানিটি ধারাবাহিক লোকসান দিয়ে যাচ্ছে। তৃতীয় প্রান্তিক (জুলাই-২০-মার্চ ২১) ৪৭ টাকা ৮ পয়সা লোকসান দিয়েছে। কোম্পানিটি এ বছরও বিনিয়োগকারীদের ডিভিডেন্ড দিতে পারবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।
জেমিনি সি ফুড : এই কোম্পানির শেয়ার গত জুন ২০২১ থেকে ধারাবাহিকভাবে ঊর্ধ্বমুখী ধারায় রয়েছে। গত জুন ২১ এ কোম্পানির শেয়ার ১৩৯ টাকা ১০ পয়সা থেকে বেড়ে আগস্টে এসে ২৩৩ টাকা ৭০ পয়সায় এসে দাঁড়িয়েছে। গত তিন মাসে প্রায় ৬৮ শতাংশ বেড়েছে শেয়ারটির দর। ১৯৮৫ সালে তালিকাভুক্তি হওয়া এই কোম্পানির অনুমোদিত মূলধন ৪০ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ৪ কোটি টাকা। কোম্পানিটির পুঞ্জিভূত লোকসানের পরিমাণ রয়েছে ৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা। ২০১৯ সাল পরবর্তী সময়ে কোম্পানিটি ধারাবাহিকভাবে লোকসান দিয়ে চলেছে। ২০২০ সালে কোম্পানির শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছিল ৯ টাকা ৮৩ পয়সা। ফলে কোম্পানি শেয়ারহোল্ডারদের কোন ডিভিডেন্ড দিতে পারেনি। ২০২১ সালে এসেও কোম্পানিটি ধারাবাহিক লোকসান দিয়ে যাচ্ছে। তৃতীয় প্রান্তিক (জুলাই-২০-মার্চ ২১) ৬ টাকা ২৩ পয়সা লোকসান দিয়েছে। ফলে কোম্পানিটি এই বছরও বিনিয়োগকারীদের ডিভিডেন্ড দিতে পারবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
রহিমা ফুড কর্পোরেশন : গত ২১ জুন এই কোম্পানির শেয়ার ২১৫ টাকা ৯০ পয়সা থেকে বেড়ে আগস্ট, ২১ এ এসে ৩৩৮ টাকা ১০ পয়সায় এসে দাঁড়িয়েছে। বিগত তিন মাসে প্রায় ৫৬.৬০ শতাংশ বেড়েছে শেয়ারটির দর। কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ৫০ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ২০ কোটি টাকা। কোম্পানিটির পুঞ্জিভূত লোকসানের পরিমাণ রয়েছে ৮৫ লাখ টাকা। ২০১৯ সাল পরবর্তী সময়ে কোম্পানিটি লোকসান দিয়ে যাচ্ছে। ২০২০ সালে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছিল ১ টাকা ২০ পয়সা। ফলে কোম্পানি শেয়ারহোল্ডারদের কোন ডিভিডেন্ড দিতে পারেনি। যদিও কোম্পানিটি ধারাবাহিক লোকসান ও উৎপাদন বন্ধ থাকার ফলে শেয়ারবাজার থেকে তালিকাচ্যুত হয়। পরবর্তীতে আবার আয়ের ধারায় ফিরে নিয়মিত লেনদেন করে যাচ্ছে। ২০২১ সালে এসেও কোম্পানিটি তৃতীয় প্রান্তিক (জুলাই-২০-মার্চ ২১) শেয়ার প্রতি মুনাফা দেখিয়েছে ০৬ পয়সা। এই আয় দিয়ে এই বছরও বিনিয়োগকারীদের ডিভিডেন্ড দিতে পারবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে