আজকের দিন তারিখ ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার, ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
সম্পাদকীয় লোভের আগুনে কত স্বপ্ন পুড়বে?

লোভের আগুনে কত স্বপ্ন পুড়বে?


পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: জুলাই ১১, ২০২১ , ১২:৩৭ অপরাহ্ণ | বিভাগ: সম্পাদকীয়


নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাসেম ফুড এন্ড বেভারেজ ফ্যাক্টরিতে অগ্নিকাÐে ৫২ শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক। অবরুদ্ধ ভবনে এ রকম গণমৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নেয়ার মতো নয়। এর আগে একইভাবে গার্মেন্ট কারখানায় আগুন লাগা ও শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। বারবার এ রকম ঘটনা ঘটতে থাকবে এবং আমরা শোক আর উদ্বেগ প্রকাশ করেই যাব? এর কি কোনো প্রতিকার হবে না? গত বৃহস্পতিবার বিকালে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সেজান জুস কারখানায় আগুন লাগে। কারখানার ছয়তলা ভবনটিতে তখন চারশর বেশি কর্মী কাজ করছিলেন। কারখানায় প্লাস্টিক, কাগজসহ মোড়কীকরণের প্রচুর সরঞ্জাম থাকায় আগুন মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে সব ফ্লোরে। প্রচুর পরিমাণ দাহ্য পদার্থ থাকায় কয়েকটি ফ্লোরের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিটের ২০ ঘণ্টার বেশি সময় লাগে। কারখানায় আগুনের ঘটনায় নিখোঁজ রয়েছেন অর্ধশতাধিক ব্যক্তি। জানা গেছে, ৩৫ হাজার বর্গফুট আয়তনের ছয়তলা কারখানার ভবনে অগ্নিনিরাপত্তার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছিল না। জরুরি বের হওয়ার প্রয়োজনীয় সংখ্যক পথও সেখানে ছিল না। ছাদে ওঠার দুটি সিঁড়ির মধ্যে একটি ছিল তালা লাগানো, যেটি খোলা থাকলে অনেক মানুষের প্রাণ বাঁচানো যেত। অনেকে জানালা ভেঙে লাফ দিয়ে, কেউ কেউ বাঁশের মাচা বেয়ে নামার ব্যর্থ চেষ্টা করেন। অবরুদ্ধ অবস্থায় পুড়ে ছাই হয়ে যান অসহায় মানুষগুলো। একজন শ্রমিকের জীবনের সঙ্গে একেকটি পরিবারের সদস্যদের জীবনও বিপন্ন হয়ে যায় নিমেষে। এ ক্ষতি কি পূরণ করা সম্ভব? বলার অপেক্ষা রাখে না, এ ঘটনায় গোটা বাংলাদেশ শোকার্ত। কিন্তু এই কান্না, এই শোক কি ঠেকাতে পারবে এ রকম শোকাবহ ঘটনার পুনরাবৃত্তি? কারখানার মালিকরা বিভিন্ন সময় প্রতিশ্রæতি দিয়েছিলেন, এমন দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে সেদিকে নজর দেবেন, শ্রমিকের জীবনের নিরাপত্তা দেবেন; কারখানায় অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র থাকবে, যে কোনো দুর্ঘটনাকালে প্রাণরক্ষার্থে শ্রমিকদের বেরিয়ে আসার বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হবে ইত্যাদি। গার্মেন্টস শ্রমিকদের নিরাপত্তায় আদালতেরও বিশদ নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু এসবের কতটুকু, কতটি কারখানায় বাস্তবায়িত হয়েছে তার কি কোনো খবর কোথাও রাখা হচ্ছে? রূপগঞ্জের ঘটনা তদন্ত করে অবশ্যই দায়ীদের বিচারাধীন করতে হবে; নিহতদের প্রকৃত সংখ্যা নিরূপণ করে প্রত্যেক পরিবারের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করতে হবে। ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কমিটি গঠন করা হয়েছে। গতকাল কারখানার চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবুল হাসেমসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। অগ্নিকাÐের পর ভবন নির্মাণের কোড না মানা, জরুরি নির্গমনের পথে তালা লাগিয়ে রাখা ও শিশুশ্রমের বিষয়গুলো নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে তদন্ত কমিটিগুলো। আমরা আশা করব তদন্ত কমিটি দ্রæত রিপোর্ট জমা দেবে। সবচেয়ে বড় কথা, এ রকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে হবে। আমরা মনে করি, শ্রমিক নিরাপত্তার অন্যসব ব্যবস্থার সঙ্গে আগুন নেভানোর নিজস্ব ব্যবস্থা ও দক্ষতা প্রতিটি গার্মেন্টে থাকা একান্ত জরুরি এবং সেটা কঠোর মনিটরিংয়ের আওতায় থাকতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে কিছু মানুষের লোভের আগুনে যেন আর একটিও তাজা প্রাণ ছাই হতে না পারে। শ্রমিকদের স্বার্থে সরকারকে অবশ্যই দায়িত্বশীল ভ‚মিকা রাখতে হবে।