শেখ হাসিনার সংগ্রামী জীবন
পোস্ট করেছেন: dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২১ , ১০:৪৭ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: /////হাইলাইটস/////
দিনের শেষে প্রতিবেদক : বাংলাদেশের উন্নয়নের রূপকার দূরদর্শী ও বলিষ্ঠ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৫তম জন্মদিন আজ। তিনি ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের মধুমতি নদী বিধৌত টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছার জ্যেষ্ঠ সন্তান এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি তিনি।
তার মেধা-মনন, সততা, নিষ্ঠা, যোগ্যতা, প্রজ্ঞা, দক্ষতা, সৃজনশীলতা, উদারমুক্ত গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্র। একসময়ের কথিত ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’, দারিদ্র্য-দুর্ভিক্ষে জর্জরিত দেশ আজ বিশ্বজয়ের নবতর অভিযাত্রায় এগিয়ে চলছে। বিশ্বসভায় আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাঙালি জাতি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংগ্রামমুখর বর্ণাঢ্য জীবনের কিছু অংশ নিচে তুলে ধরা হলো-
১৯৪৭: গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন শেখ হাসিনা। তার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতির পিতা এবং তার মা ফজিলাতুননেছা মুজিব ‘বঙ্গমাতা’ হিসাবে পরিচিত। পরিবারে পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড় শেখ হাসিনা।
১৯৬৫: আজিমপুর গার্লস স্কুল থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ের লেখাপড়া শেষ করেন।
১৯৬৭: তৎকালীন সরকারি ইন্টারমিডিয়েট কলেজ (বর্তমান বদরুন্নেসা কলেজ) থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের লেখাপড়া শেষ করেন। কলেজে ১৯৬৬-৬৭ সালে কলেজ স্টুডেন্ট ইউনিয়নের নির্বাচিত ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি।
১৯৬৮: পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়াকে বিয়ে করেন তিনি।
১৯৭১: প্রথম সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় ২৭ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন।
১৯৭২: মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ৯ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন।
১৯৭৩: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ শাখার সদস্য এবং রোকেয়া হল ছাত্রলীগ ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি।
১৯৭৫: কিছু বিপথগামী সেনা সদস্য ১৫ আগস্ট ভোরে তার বাসায় অস্ত্রসহ হামলা চালায়। এ সময় তার বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তার মা, তিন ভাই, দুই ভাইয়ের স্ত্রী এবং বাড়িতে থাকা আত্মীয়দের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
এ সময় তিনি এবং তার ছোট বোন শেখ রেহানা পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থান করার কারণে প্রাণে বেঁচে যান।
১৯৭৫-১৯৮১: তৎকালীন সরকার দেশে প্রবেশ নিষিদ্ধ করায় বাধ্য হয়ে নির্বাসনে থাকতে হয় শেখ হাসিনাকে।
১৯৮১: দেশে না থেকেও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা এবং একই বছর ১৭ মে দেশে ফিরে আসেন তিনি।
১৯৮৩: হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মার্শাল ল এর বিরুদ্ধে আন্দোলনের জন্য গণতন্ত্রপন্থি ১৫ প্রগতিশীল দল নিয়ে জোট গঠন করেন এবং আন্দোলন করেন।
১৯৮৪: এই বছরের ফেব্রুয়ারি ও নভেম্বরে তাকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়।
১৯৮৫: মার্চ থেকে মে পর্যন্ত তাকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়।
১৯৮৬: তার অধীনে থাকা জোট নির্বাচনে অংশ নেয় এবং ৯৭ আসনে বিজয়ী হয়। শেখ হাসিনা বিজয়ী হন তিন আসন থেকে। সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা হন তিনি
১৯৮৭: জুলাইয়ে সেনা সদস্যদের স্থানীয় প্রশাসনে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য একটি বিল পাশ করতে তোড়জোড় শুরু করে এরশাদের সামরিক সরকার। এ সময় বিরোধী দলে থাকা শেখ হাসিনা পার্লামেন্ট থেকে ‘ওয়াক আউট’ করেন এবং এই বিলের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেন। এরশাদের সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে পার্লামেন্ট সদস্য পদ থেকে ইস্তফা দেন।
১৯৯০: আট দলীয় জোটকে নিয়ে জোরালো রাজনৈতিক আন্দোলন শুরু হয় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। যেখানে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি অন্যান্য দলও অংশ নেয়। ৬ ডিসেম্বর জেনারেল এরশাদ ক্ষমতা থেকে পদত্যাগ করেন।
১৯৯১: এরশাদের সামরিক শাসনের পতনের পর পঞ্চম জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ৭ ফেব্রুয়ারি। সেখানে ৮৮ আসনে বিজয়ী হয় আওয়ামী লীগ। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিরোধী দল হিসাবে সংসদে যায় আওয়ামী লীগ।
১৯৯৪: পার্লামেন্টারি বাই-ইলেকশনের ষড়যন্ত্র রুখে দিতে সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু করেন শেখ হাসিনা। এ সময় তার নেতৃত্বে বিরোধী দল সংসদ ত্যাগ করে এবং ডিসেম্বরে সংসদ পদ থেকে ইস্তফা দেন সবাই।
১৯৯৫: নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আন্দোলন করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও জোটে থাকা রাজনৈতিক দলগুলো।
১৯৯৬: ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ জাতীয় নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দেয় আওয়ামী লীগ। তাদের জোটে থাকা অন্যান্য দলও এই নির্বাচন বয়কট করে। তীব্র আন্দোলন চলে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে। ফলে তৎকালীন সরকার বাধ্য হয় পার্লামেন্টে এই বিল পাশ করতে। তিন মাসের মধ্যে এই পার্লামেন্ট বাতিল করে পুনরায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ১২ জুন অনুষ্ঠিত এই সপ্তম জাতীয় নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ১৪৬ আসনে বিজয়ী হয়। ২৩ জুন দেশের দশম প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ গ্রহণ করেন শেখ হাসিনা। একই বছর নভেম্বরে দীর্ঘদিন ধরে অমীমাংসিত গঙ্গা-পদ্মা নদীর ৩০ বছর মেয়াদি চুক্তি করেন শেখ হাসিনা।
১৯৯৭: জনসংহতি সমিতি নামে এক সশস্ত্র দলের সঙ্গে শান্তি চুক্তি হয় ডিসেম্বরে। যার মাধ্যমে কয়েক দশক ধরে চলমান চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের উত্তেজনা প্রশমন হয়।
২০০১: সফলতার সঙ্গে ৫ বছর দেশ পরিচালনার পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে শেখ হাসিনা সরকার। এর মাধ্যমে প্রথমবারের মতো সঠিক সময় পর্যন্ত ক্ষমতায় থেকে তা শান্তিপূর্ণভাবে হস্তান্তর করে কোনো সরকার। অষ্টম জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১ অক্টোবর, যেখানে ৬২ আসনে বিজয়ী হয়ে তৃতীয়বারের মতো সংসদে বিরোধী দল গঠন করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
২০০৪: শেখ হাসিনা অল্পের জন্য রক্ষা পান গ্রেনেড হামলা থেকে। ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে তার ওপর গ্রেনেড হামলার পাশাপাশি গুলিও চালানো হয়। এ ঘটনায় তিনি গুরুতর আহত হন।
২০০৫: ১৪ দলের সমন্বয়ে পরবর্তী নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ করার জন্য নির্বাচন ব্যবস্থা ও গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির জন্য কার্যক্রম শুরু।
২০০৭-২০০৮: তত্ত্বাবধায়ক সরকার নির্বাসনে রাখার চেষ্টা করে, কিন্তু দৃঢ়চিত্তে সব ভয় ও চোখ রাঙানো উপেক্ষা করে দেশে ফিরে আসেন শেখ হাসিনা। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন মিথ্যা দুর্নীতির মামলা প্রদান করা হয় এবং প্রায় এক বছর জেলে আটকে রাখা হয়।
২০০৮: তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নবম জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২৯ ডিসেম্বর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৪ দল ২৬২ আসনে বিজয়ী হয়, যেখানে আওয়ামী লীগ বিজয় লাভ করে ২৩০ আসনে।
২০০৯: দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ গ্রহণ করে শেখ হাসিনা ৬ জানুয়ারি। এই বছর ৯ মে তার স্বামী পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়া মারা যান। একই সঙ্গে এই বছর ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি দিতে গঠন করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
২০১০: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারীদের মধ্য থেকে ৫ জনের ফাঁসি কার্যকর করা হয় ২৮ জানুয়ারি।
২০১১: টাইম ম্যাগাজিনের আগস্ট সংখ্যায় শীর্ষে থাকা ১২ নারী নেতৃত্বের মধ্যে সপ্তম হন শেখ হাসিনা। এই বছর ৫ সেপ্টেম্বর ভারত-বাংলাদেশ ৬৪ বছরের সীমান্ত সমস্যা সমাধানে চুক্তি স্বাক্ষর করে।
২০১২: জাতিসংঘের ৬৭তম অধিবেশনে ১৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রস্তাবিত শান্তি ও সমৃদ্ধির মডেল সবার কাছে সমাদৃত হয়।
২০১৩: মুক্তিযুদ্ধে ১৯৭১ সালে যুদ্ধাপরাধের দায়ে গোলাম আযমকে ৯০ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করা হয় ১৫ জুলাই। এই বছর ১২ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসি দেয়া হয় কাদের মোল্লাকে।
২০১৪: এ বছর ৫ জানুয়ারি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় যেখানে ২৩৪ আসনে পাশ করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। ১২ জানুয়ারি তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ গ্রহণ করেন শেখ হাসিনা। এ বছর ১৭ এপ্রিল দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধে সম্পৃক্ত থাকার দায়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।
২০১৫: মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্ত থাকার দায়ে ১১ এপ্রিল ফাঁসি কার্যকর করা হয় যুদ্ধাপরাধী মুহাম্মদ কামরুজ্জামানের। ৩১ জুলাই বাংলাদেশ ও ভারতের ছিটমহলগুলোর বাসিন্দাদের ও সীমানা নিয়ে কার্যক্রম শুরু করা হয়। এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া শেষ হয় ৩০ জুনের মধ্যে। ২২ নভেম্বর আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ এবং সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
২০১৬: ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ১১ মে মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসি কার্যকর হয়। একই বছর ৩ সেপ্টেম্বর মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্ত থাকায় মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকর করা হয়। এ বছর জুনে মার্কিন ম্যাগাজিন ফোর্বসে বিশ্বের সর্বোচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৬তম ব্যক্তি হিসাবে শেখ হাসিনার নাম ঘোষণা করা হয়।
২০১৭: সেপ্টেম্বর মাসে মিয়ানমার থেকে জীবন ভয়ে পালিয়ে আসা ৭ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয় বাংলাদেশ।
২০১৮-২০১৯: ১১তম জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ৭ জানুয়ারি, যেখানে বিজয়ী হয়ে চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ গ্রহণ করেন শেখ হাসিনা।
২০২০: এই বছরের শুরুতেই সারা বিশ্বসহ বাংলাদেশ যখন করোনাসংকটে নানা অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে তখন তা মোকাবিলায় দ্রুত নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক লাখ ৩৪ হাজার ৬৪১ কোটি টাকার ২৯টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। সেই সাথে নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য সারাদেশে ব্যপকভাবে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন।
২০২১: বিশ্বের বেশিরভাগ দেশই যখন করোনা মহামারিতে ভ্যাকসিন প্রাপ্তি নিয়ে লড়ে যাচ্ছে তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার নেতৃত্বগুণে বাংলাদেশের মানুষের জন্য দ্রুততম সময়ে পুরোদমে সারাদেশে ভ্যাকসিন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।