শেয়ারবাজারে আস্থা বাড়াতে প্রয়োজন কার্যকর উদ্যোগ
পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: জুলাই ১৯, ২০২০ , ১১:৫৯ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: অর্থ ও বাণিজ্য
দিনের শেষে প্রতিবেদক : দেশের শেয়ারবাজারে মূল সমস্যা বিনিয়োগকারীদের আস্থা সংকট। বহু কারণে এ সংকট তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- সুশাসনের ঘাটতি, ভালো কোম্পানির শেয়ারের অভাব, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) অযাচিত হস্তক্ষেপ এবং দুর্বল কোম্পানি তালিকাভুক্ত।
এছাড়াও করোনার আতঙ্কে টানা ৫ মাস কোম্পানিগুলোর শেয়ার মূল্যের ফ্লোর প্রাইস (কৃত্রিম সাপোর্ট) দিয়ে রাখা হচ্ছে। এতে বিনিয়োগকারীদের আস্থা আরও কমেছে। এ অবস্থার উত্তরণে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। শেয়ারবাজার বিষয়ে শনিবার এক অনলাইন সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) এ সেমিনারের আয়োজন করে।
সেমিনারে বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, যত দ্রুত সম্ভব ফ্লোর প্রাইসের বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সিএসইর চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন- মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এমসিসিআই) সভাপতি নিহাদ কবির, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজের (বিএপিএলসি) সভাপতি আজম জে চৌধুরী, ডিএসইর এমডি কাজী সানাউল হক, সিএসইর এমডি মামুন-উর-রশীদ, আইসিবির এমডি আবুল হোসেন, ডিএসই ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শরীফ আনোয়ার হোসেন, ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি সেলিম আর এফ হুসাইন এবং ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক এসএম রাশিদুল ইসলাম।
করোনার প্রকোপ শুরু হলে দেশের শেয়ারবাজারে ভয়াবহ পতন দেখা দেয়। এ পতন ঠেকাতে ১৯ মার্চ প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস (সর্বনিম্ন দাম) নির্ধারণ করে নতুন সার্কিট ব্রেকার চালু করা হয়। এতে দরপতন ঠেকানো গেলেও দেখা দেয় লেনদেন খরা। এ অবস্থায় একটি পক্ষ থেকে ফ্লোর প্রাইস তুলে দেয়ার জন্য নানামুখী চাপ দেয়া হচ্ছে। শনিবারের সেমিনারেও ফ্লোর প্রাইস নিয়ে সমালোচনা করা হয়।
অনুষ্ঠানে বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, ফ্লোর প্রাইস এক ধরনের প্রতিবন্ধকতা, এটা আমরাও বুঝি। কারণ বাজারকে স্বাভাবিকভাবে চলতে দেয়া উচিত। তবে বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। কিছু বিষয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে কথা বলে যত দ্রুত সম্ভব আমরা এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেব।
তার মতে, বাজারের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা থাকলে টাকার অভাব হবে না। তিনি আরও বলেন, আমরা যখন যোগদান করেছিলাম তখন লেনদেন ছিল ৫০ কোটি টাকার মতো। এখন সেটা ৩শ’ কোটি টাকার ওপরে চলে যাচ্ছে, এটা আশার ব্যাপার। আমরা আশা করি শিগগিরই এটা ৫শ’ কোটি টাকার ওপরে চলে যাবে। মূলত বাজারের ওপর বিশ্বাস বা আস্থা এলে টাকার অভাব হবে না।
অধ্যাপক শিবলী বলেন, ক্রেস্ট সিকিউরিটিজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান অনিয়ম করেছিল। ডিএসইর সহায়তায় আমরা দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছি। বাজারে মেসেজ গেছে কেউ অনিয়ম করলে পার পাবে না। তিনি আরও বলেন, ব্যাংকের ২শ’ কোটি টাকার যে তহবিল গঠনের সুযোগ দেয়া হয়েছে, সেখানে কিছু প্রতিবন্ধকতা আছে। এই প্রতিবন্ধকতা দূর করতে আমরা বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিয়েছি। আশাকরি এ প্রতিবন্ধকতা দূর হয়ে যাবে।
বিএপিএলসির সভাপতি আজম জে চৌধুরী বলেন, ব্যাংকগুলোর বড় সমস্যা খেলাপি। কিন্তু শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে কোনো ব্যাংক সমস্যায় আছে- এমন কোনো তথ্য আমার জানা নেই। অথচ ব্যাংকগুলোকে ইক্যুইটির ২৫ শতাংশ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে। এটা ঠিক না। বিনিয়োগ কী পরিমাণ করবে, সেটা ব্যাংকের ওপরই ছেড়ে দেয়া উচিত।
তিনি বলেন, অনিয়মকারীদের শাস্তির আওতায় আনলে শেয়ারবাজারের প্রতি আস্থা স্বাভাবিকভাবেই বাড়বে। তাই যখনই অনিয়ম হবে, তখনই শাস্তি দিতে হবে। তিনি বলেন, শেয়ারবাজারে এ মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তারল্য। তবে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে টাকা নেই। যদিও এরা প্রাইমারি ইনভেস্টর।
আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল হোসেন বলেন, ২০১০ সালের ধস শুরুর পর থেকেই আইসিবি বিনিয়োগ করে আসছে। নিজের ব্যবসার কথা চিন্তা না করে শুধু শেয়ারবাজারকে সাপোর্ট দেয়ার জন্য বিনিয়োগ করেছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ১১ হাজার কোটি টাকা এনে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেছে।
তবে ২০২০ সালে এসে আইসিবি বিনিয়োগ সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী আইসিবির বিনিয়োগ সক্ষমতা বাড়ানোর কথা বলেছেন। এটা এখন বাড়ানোর জন্য আইসিবির গৃহীত ঋণের সুদহার কমানো উচিত। আর তিন মাস অন্তর সুদ না নিয়ে বছর শেষে দেয়ার জন্য সুযোগ দিতে হবে। এ মুহূর্তে শেয়ার বিক্রি করে সুদ দেয়া সম্ভব না।