সহিংসতা হলে রুখে দেওয়ার প্রস্তুতি আওয়ামী লীগের
পোস্ট করেছেন: dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: অক্টোবর ২৫, ২০২৩ , ৩:১৯ অপরাহ্ণ | বিভাগ: /////হাইলাইটস/////
সানি আজাদ : ২৮ অক্টোবর ২০০৬। ১৭ বছর পর, ফের ২৮ অক্টোবর ২০২৩। ফের রাজপথে নামছে দুই পক্ষ। আতঙ্ক তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। সমস্যা সমাধানে রাজপথ ছেড়ে আলোচনার টেবিলে বসার পরামর্শ দিয়েছেন বিশিষ্টজনরা। সরকার পতনের এক দফা দাবি আদায়ে ২৮ অক্টোবর ঢাকার নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ ডেকেছে বিএনপি। এরই মধ্যে জামায়াতও শাপলা চত্বরে সমাবেশের কর্মসূচি দিয়েছে। জবাবে আওয়ামী লীগও জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ ফটকে কর্মসূচি দিয়েছে শান্তি সমাবেশের। নির্বাচনকালীন সরকারের ৯০ দিন শুরুর আগ মুহূর্তে এসব কর্মসূচি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে সব মহল। বিএনপির ঢাকায় ‘বসে পড়া’র ভয় তাড়া করছে সবাইকে। কারণ ২ কোটি মানুষের এ শহরে রাস্তা বন্ধ করে বসে পড়লে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে। এরই মধ্যে বিএনপি ও সমমনাদের রুখে দিতে মাঠে থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ। এদিন ঢাকায় ১০ লাখ লোকের সমাগম করে বিএনপির রাজনৈতিক কবর রচনার হুমকি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
পাশাপাশি ঢাকা দখল করতে এলে ‘প্যাদানি দিয়ে’ বুড়িগঙ্গা পার করে দেওয়ারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দলটির নেতারা। এ নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, বিএনপি নামক দলটি মাহুত ছাড়া পাগলা হাতি। তাদের নেতৃত্বের ঠিক নেই। এটি যে কার কথা মতো চলছে, এটা কেউ বলতে পারবে না। তাদের আন্দোলনের অতীত অভিজ্ঞতা হলো সহিংসতা। এখনো বিএনপির ওপর বিশ্বাস করা যায় না। তারা কী চায়? মানুষের মধ্যে কিন্তু আতঙ্ক আছে। তারা যে কথা বলছে, বা চাউর আছে- তারা ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বসে পড়বে বা শহরকে কলাপস করে দেবে। এটা হলে তো জনজীবন বিপর্যস্ত হবে। ‘তারা চায়, এ সরকারকে উৎখাত করতে। এ সরকার তো সামরিক সরকার না। জনগণের দল আওয়ামী লীগ, আওয়ামী লীগ সরকারকে উল্টে ফেলে দেওয়ার শক্তি কারো নেই। গত ১৫ বছরে এত পরিকল্পনা করেছে, কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে। আগামী ২৮ তারিখের আন্দোলন সফল করতেও শত কোটি টাকা খরচ করেছে। আমার বিশ্বাস, এটিও ফানুসে পরিণত হবে। ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে।
আওয়ামী লীগের এ নেতা বলেন, আমরা গণতন্ত্রপ্রিয় শক্তিশালি বিরোধী দল চাই। কিন্তু বিএনপি সঠিক পথে হাঁটছে না। তারা যে পথে হাঁটছে, সে পথে তাদের মরণ অনিবার্য। যদি তারা কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, নির্বাচন বা সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা বাধাগ্রস্ত করতে চায়, তাহলে আওয়ামী লীগেরও অধিকার আছে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য রুখে দাঁড়াবার। আমরা তাদের রুখে দেবো। দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, বিএনপি জামায়াতের এ আলটিমেটাম নতুন নয়। এর আগেও তারা আলটিমেটাম দিয়েছিল। খালেদা জিয়ার দুর্নীতির মামলা চলমান অবস্থাতেও মামলা প্রত্যাহারের জন্য তারা আলটিমেটাম দিয়েছিল। ২০১৪-১৫ সালেও আলটিমেটাম দিয়েছে। গেল বছরের ১০ ডিসেম্বরেও তারা ঘোষণা দিয়েছিল। এগুলো মানুষ এখন আর বিশ্বাস করে না। এ নিয়ে দেশের মানুষের কৌতুহল নেই। তিনি বলেন, তিনটি রাজনৈতিক দলেরই তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করার অধিকার আছে। কিন্তু যদি রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে, বা সরকার পতনের নামে কোনো সহিংসতা করে বা নাশকতা করে, তাহলে সরকার কঠোর অবস্থানে যাবে। বিএনপি নামক দলটি মাহুত ছাড়া পাগলা হাতি। তাদের নেতৃত্বের ঠিক নেই। এটি যে কার কথা মতো চলছে, এটা কেউ বলতে পারবে না।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, ২৮ অক্টোবর নিয়ে হুমকি, ধামকিতে আওয়ামী লীগ বিচলিত নয়। সেদিন রাজপথে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সরব উপস্থিতি থাকবে। যেকোন ধরনের অরাজনৈতিক উদ্যোগ প্রতিহত করা হবে। অন্যদিকে রাষ্ট্রযন্ত্র তাদের ওপর অর্পিত আইনানুগ দায়িত্ব পালন করবে। এদিকে, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নাল আবেদিন ফারুক বলেন, আমাদের প্রস্তুতি তো আপনাদের বলবো না। আমরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে ফাইট করছি কৌশলে। আমাদের নেতা তারেক রহমান কৌশলে এগিয়ে আছেন। সেজন্য জনগণের সমর্থনে এগিয়ে আছি, আন্দোলনেও এগিয়ে আছি, জনগণকে সম্পৃক্ত করার ক্ষেত্রেও এগিয়ে আছি। তারা (আওয়ামী লীগ) যে ধমক-টমক দিচ্ছে, এগুলো আমরা কর্ণপাত করবো না। আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি করবো। আমাদের ২৮ তারিখের মহাসমাবেশ নির্ধারিত স্থানেই সফল করবো। কে কোথায় করলো, আমাদের দেখার বিষয় নয়। তবে আমাদের ওপর আঘাত আসলে আমরা প্রতিরোধ করার চেষ্টা করবো। দলটির আরেক নেতা ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, বিএনপি সারাদেশে গণকর্মসূচি চালিয়েছে। ২৮ তারিখেও বিএনপি মহাসমাবেশ ডেকেছে।
সারাদেশ থেকে মানুষ আসবে। মানুষের ভোটের অধিকারের দাবি সরকারের কানে যাবে। সরকার নিশ্চয়ই ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, জনগণ যেন ভোট দিতে পারে। সরকার যদি ২৮ অক্টোবর দাবি মেনে না নেয়, তাহলে আওয়ামী লীগ ৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে যে আন্দোলন করেছিল, যা যা করেছিল, বিএনপিও তাই করবে।
এদিকে, আগামী ২৮ অক্টোবর রাজনৈতিক দলগুলোর সমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকা শহরের প্রবেশদ্বারগুলোতে চেকপোস্ট বসাবে র্যাব। যাতে করে কেউ নাশকতার জন্য আগ্নেয়াস্ত্র বা বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ে সমাবেশে প্রবেশ করতে না পারে। একইভাবে গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও চেকপোস্ট বসানো হবে। দুপুরে কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন, র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ। দেশের রাজনৈতিক দলগুলো শান্তিপূর্ণভাবে সভা-সমাবেশ করবে এটিই স্বাভাবিক। সম্প্রতি দেখা গেছে শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হিসেবে নগরবাসীকে সব ধরনের নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছে র্যাব। সমাবেশেকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা দেওয়া হবে। র্যাবের মুখপাত্র বলেন, ২৮ অক্টোবর বেশ কয়েকটি দল সমাবেশের অনুমতি চেয়েছে। সমাবেশ কোথায় হবে সেটির অনুমতি ডিএমপির এখতিয়ারভুক্ত। এলিট ফোর্স র্যাবের মূল ম্যান্ডেট জনগণের নিরাপত্তা দেওয়া৷ পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় সম্পদের রক্ষা করা। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের সুরক্ষা দেওয়ার জন্য র্যাব দায়িত্ব পালন করে যাবে।
তিনি আরও বলেন, সমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীসহ মহাসড়কগুলোতে পেট্রোলিং জোরদার করা হয়েছে। যাতে করে সাধারণ জনগণ নিশ্চিতে তাদের কাজগুলো করতে পারেন। কারও যদি নাশকতার পরিকল্পনা থাকে তাদেরকে আইডেন্টিফাই করে আইনের আওতায় আনতে গোয়েন্দা কাজ করছে। সর্বোপরি রাজনৈতিক কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে কোনো স্বার্থান্বেষী মহল কোনো ধরনের নাশকতা বা সহিংসতা করতে না পারে এজন্য গোয়েন্দারাও কাজ করছে। সাইবার ওয়ার্ল্ডেও র্যাবের কাজ চলছে। কমান্ডার মঈন বলেন, এরপরেও যদি কোনো নাশকতার বা সহিংসতা হয় সেক্ষেত্রে র্যাবের স্ট্রাইকিং ফোর্স, স্পেশাল ফোর্স প্রস্তুত রয়েছে। যেকোনো উদ্ভুত পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য র্যাব সদা প্রস্তুত। জামায়াত ইসলামীর সমাবেশ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার মঈন বলেন, সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হবে কিনা তা ডিএমপি দেখবে। যদি অনুমতি দেওয়া না হয় এবং জামায়াত সমাবেশ করার চেষ্টা বা নাশকতার চেষ্টা করে তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।