হাইতিতে ভূমিকম্প: দুর্যোগ মোকাবিলায় আমরা কতটা প্রস্তুত
পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: আগস্ট ১৬, ২০২১ , ২:০৮ অপরাহ্ণ | বিভাগ: সম্পাদকীয়
ক্যারিবীয় অঞ্চলের দ্বীপ দেশ হাইতিতে ৭ দশমিক ২ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে এখনো পর্যন্ত তিন শতাধিকেরও বেশি মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এতে কমপক্ষে ১ হাজার ৮০০ মানুষ আহত হয়েছে। গত শনিবার হাইতির স্থানীয় সময় সকালে এ ভ‚মিকম্পে গির্জা ও হোটেলসহ বহু ভবন পুরো ধসে পড়েছে ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভূমিকম্পে ব্যাপকসংখ্যক মানুষের প্রাণহানিতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। ২০১০ সালে ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে লাখো মানুষের মৃত্যু ও ক্ষয়ক্ষতি এখনো পুষিয়ে উঠতে পারেনি দেশটি। এমন দুর্যোগের কবলে আমরাও পড়তে পারি। বাংলাদেশের দুদিকের ভ‚-গঠনে শক্তিশালী ভূমিকম্পের শক্তি জমা হয়েছে। এর একটা হচ্ছে উত্তর-পূর্ব কোণে সিলেট অঞ্চলে ডাউকি ফল্টে, আরেকটা হচ্ছে পূর্বে চিটাগং-ত্রিপুরা বেল্টে পাহাড়ি অঞ্চলে। এখানে দুটি বড় ধরনের ভ‚মিকম্প বাংলাদেশের দ্বারপ্রান্তে অবস্থান করছে। ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল হিসেবে বাংলাদেশের কথা উঠে এসেছে বারবার। বিশেষজ্ঞের মতে, বাংলাদেশ এখন কোনোমতেই ঝুঁকিমুক্ত নয়। এ জন্য ভ‚মিকম্প মোকাবিলায় প্রস্তুতি থাকতে হবে। আমরা কতটা প্রস্তুত সে ব্যাপারে নতুন করে ভাবতে হবে। নিতে হবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। গত ৫০০-৬০০ বছরে বড় ধরনের ভূমিকম্পের কোনো রেকর্ড নেই। তার মানে পাঁচ-ছয় মিটার চ্যুতি ঘটানোর মতো শক্তি অর্জন করেছে। এটা যদি রিখটার স্কেলে প্রকাশ করা হয় তাহলে এটা হচ্ছে ৭.৫ থেকে ৮ মাত্রার ভ‚মিকম্প সৃষ্টি করতে পারে। রাজধানী ঢাকার আশপাশে বড় মাত্রার ভূমিকম্পে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবে ঢাকা মহানগরীর। ঢাকার মধ্যে বড় ভ‚মিকম্প সৃষ্টির মতো ভ‚তাত্তি¡ক অবস্থা না থাকলেও সিলেট ও চট্টগ্রামে শক্তিশালী ভূমিকম্প হলে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে রাজধানী ঢাকাও। ঢাকা শহরে সিটি করপোরেশন এলাকায় রয়েছে চার লাখের বেশি ভবন। রাজউক এলাকায় যে সংখ্যা ১২ লাখেরও বেশি, যার অধিকাংশই ভূমিকম্প সহনীয় নয়। বুয়েটের সঙ্গে যৌথভাবে সরকারের সমন্বিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচি সিডিএমপির এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, সাড়ে সাত মাত্রার ভ‚মিকম্পে ঢাকার ৭২ হাজার ভবন ধসে পড়বে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় কতটা প্রস্তুত বাংলাদেশ প্রশ্ন সামনে আসছে। ভ‚মিকম্প এমন এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যাকে প্রতিরোধ করার কোনো উপায় মানুষের আয়ত্তে নেই। এমনকি এর পূর্বাভাস দেয়াও সম্ভব হয় না। তাই ভ‚মিকম্পে ক্ষয়ক্ষতি নিয়ন্ত্রণে রাখার পূর্বপ্রস্তুতিই আসল। কিন্তু গরিব দেশগুলোতে সে ধরনের প্রস্তুতি থাকে না, ফলে এসব দেশে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি হয়। জাতিসংঘ দুর্যোগ ঝুঁকি সূচকের তথ্যানুযায়ী, ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল হিসেবে বিশে^র ঝুঁকিপূর্ণ ২০টি শহরের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানেই রয়েছে ঢাকার নাম। যে কোনো সময় বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বড় ধরনের ভূমিকম্পের আশঙ্কা অমূলক নয়। কাজেই এ ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের সরকার বা জনগণ কতটা প্রস্তুত সেটা বিবেচনায় আনা খুবই জরুরি। উদ্বেগের কথা হলো, এ ব্যাপারে সরকারের তরফে তেমন কোনো প্রস্তুতি বা সাধারণের মধ্যেও খুব একটা সচেতনতা দেখা যাচ্ছে না। বুঝতে হবে, অন্যান্য প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মতো ভূমিকম্পের কোনো আগাম পূর্বাভাস পাওয়া যায় না। তাই জনগণকে সম্পৃক্ত করে জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সীমিত সম্পদ ও ক্ষমতার আওতার মধ্যেই এ দুর্যোগ মোকাবিলার ত্বরিত প্রস্তুতি নেয়া ছাড়া বিকল্প কোনো পথ নেই।