১৩ বছরে মানুষ আরও দরিদ্র হয়েছে: ফখরুল
পোস্ট করেছেন: dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: জানুয়ারি ৮, ২০২২ , ৪:৫০ অপরাহ্ণ | বিভাগ: রাজনীতি
দিনের শেষে ডেস্ক : আওয়ামী লীগ সরকারের বর্তমান মেয়াদের তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এই ১৩ বছরে এদেশের সাধারণ মানুষ, যেটা মান্না সাহেব বলেছেন- দরিদ্র আরও দরিদ্র হয়েছে, চার কোটি মানুষ বেকার হয়ে গেছে এবং ছয় কোটি মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে চলে গেছে। আর বড় লোক আরও বড় লোক হয়েছেন। শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের উদ্যোগে আয়োজিত এক মানব সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি। প্রতিহিংসার বিচারে বন্দি গণতন্ত্র, স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ও জনগণের আস্থার প্রতীক, গণতন্ত্রের মা, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে’ এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
গতকাল প্রধানমন্ত্রী বক্তৃতা করেছেন উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, প্রধানমন্ত্রী দেশ ও জাতির সামনে বক্তব্য রেখেছেন। সেই বক্তব্যে বলেছেন, তিনি তার শাসন আমলে এদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে নিয়ে গেছেন। আর ২০৪১ সাল পর্যন্ত যদি তাকে আপনারা থাকতে দেন তাহলে এদেশে তিনি একটা শক্তিশালী, একটা সমৃদ্ধ ও উন্নত দেশে পরিণত করবেন।
‘এই ১৩ বছরে এদেশের সাধারণ মানুষ, যেটা মান্না সাহেব বলেছেন- দরিদ্র আরও দরিদ্র হয়েছে। চার কোটি মানুষ বেকার হয়ে গেছে। ছয় কোটি মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে চলে গেছে এবং বড় লোক বড় লোক হয়েছেন। অর্থ্যাৎ আওয়ামী লীগের লোকেরা, যারা আজকে অন্যায়ভাবে ক্ষমতার সমস্ত সুযোগ ভোগ করছেন- তারা আজকে বিভিন্ন দেশে টাকা পাচার করে দিয়ে তাদের সম্পদকে রক্ষা করতে চাচ্ছেন।’
আওয়ামী লীগের সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য আবারও তারা বিভিন্ন রকম কলা-কৌশল শুরু করেছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, সংলাপ রাষ্ট্রপতি ডেকেছেন। কিসের সংলাপ? এই সংলাপ ইতিমধ্যে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল বর্জন করেছেন। পরিষ্কার করে বলেছেন, এই সংলাপে কোন লাভ হবে না। অর্থহীন সংলাপ। কারণ নির্বাচন কমিশনের কিছুই করার নাই নির্বাচনকালীন সময়ে সরকার যদি নিরপেক্ষ না হয়।
সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আমাদের খুব স্পষ্ট কথা, সবার আগে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন। আর পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে তারপরে একটি নিরপেক্ষ কমিশন গঠন করে জনগণের ভোটের ক্ষমতাকে ফিরিয়ে দিন। এটাই হচ্ছে একমাত্র পথ। এর বাইরে আর কোন পথ নেই।
রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃবৃন্দকে উদ্দেশ্য করে ফখরুল বলেন, আজকে আসেন, আমরা সবাই ওই লক্ষ্যে- অর্থ্যাৎ বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, গণতন্ত্রের মুক্তি, এই দুটিকে এক সাথে করে আজকে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই। আমি সকল রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানাতে চাই, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দদের প্রতি আহ্বান জানাতে চাই যে, আসুন- গণতন্ত্র, মানুষের অধিকার এবং আমাদের সমস্ত অধিকারকে ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই। আর সত্যিকার অর্থে জনগণের একটা সরকার, জনগণের একটা বাংলাদেশ নির্মাণ করি এবং কল্যাণময় একটা রাষ্ট্র আমরা নির্মাণ করি।
আমরা সবাই জানি বেগম খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বেগম জিয়ার মুক্তির জন্য গত দেড় থেকে দুই মাস ধরে অত্যন্ত নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিকভাবে আমরা আন্দোলন করছি। সারাদেশে আমাদের অসংখ্য সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রত্যেক সমাবেশ থেকে লাখো মানুষের কণ্ঠ থেকে একটি আওয়াজই এসেছে, দেশনেত্রীর মুক্তি চাই।
আজকে ৩৫ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মামলা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপির ৫’শ অধিক মানুষ গুম হয়ে গেছে। আমাদের আজকে হাজারো নেতাকর্মীদেরকে হত্যা করা হয়েছে। আজকে সমস্ত দেশের মানুষের আওয়ামী লীগের কাছে জিম্মি হয়ে গেছে। এদিকে মানব সমাবেশকে কেন্দ্র করে সকাল ৯টা থেকেই ব্যানার, ফেস্টুন, খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী প্রেসক্লাবের সামনে উপস্থিত হয়। এসময় খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং সরকার বিরোধী বিভিন্ন স্লোগানে প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণ মুখরিত করে তুলেন তারা। সমাবেশকে ঘিরে প্রেসক্লাবের আশপাশে কঠোর অবস্থানে ছিলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সদস্যরা। পাশাপাশি সাদা পোশাকেও দায়িত্ব পালন করেছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
আয়োজক সংগঠনের আহ্বায়ক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমানের সভাপতিত্বে এবং নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের সদস্য সচিব নিপুন রায় চৌধুরীর সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, মশিউর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরীন সুলতানা, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি দেওয়ান মো. সালাউদ্দিন, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির উত্তর সদস্য সচিব আমিনুল হক, যুবদলের সভাপতি সাইফুল ইসলাম নীরব, শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইন, স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, কেন্দ্রীয় মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এছাড়াও মানব সমাবেশে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি চেয়ারম্যান মো. আবু তাহের বক্তব্য রাখেন।
বাংলাদেশ জার্নাল/কেএস/এমএস